ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ, ফেব্রুয়ারিতে চার গুণ বৃদ্ধির শঙ্কা

| আপডেট :  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৩  | প্রকাশিত :  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৩


ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ, ফেব্রুয়ারিতে চার গুণ বৃদ্ধির শঙ্কা

জাতীয়

বিবার্তা ডেস্ক


ধারাবাহিকভাবে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ। ইতোমধ্যে দেশে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। গত এক মাসে সংক্রমণের হার বেড়েছে চার গুণের বেশি। শীত কমলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণ আরো কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, শুক্রবার সারাদেশে সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৮.৭০ শতাংশ। শনাক্ত রোগীদের ৩২ জনই ঢাকা মহানগরের এবং একজন করে কক্সবাজার ও চাঁদপুরের। এই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিদফতর যে শনাক্তের হার দেখাচ্ছে, প্রকৃত হার এর চেয়ে অনেক বেশি। সংক্রমিত ব্যক্তি সাধারণ জ্বর, ঠাণ্ডায় কভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা করাচ্ছে না। তাই শনাক্তও হচ্ছে না। যারা পরীক্ষা করাচ্ছে তারা কোনো জরুরি প্রয়োজনে করাচ্ছে। হয় সার্জারি করার আগে, নয়তো বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে করোনা শনাক্ত হওয়া ৬৪৩ জনের মধ্যে ৬২৪ জনই ঢাকা মহানগরের। অর্থাৎ মোট শনাক্তের ৯৭ শতাংশ রোগী ঢাকার। এই সময়ে মৃত চারজনের দুজন ঢাকা মহানগরের ও দুজন চাঁদপুরের।

অধিদফতরের তথ্য মতে, বর্তমানে ২৯ জন কোভিড রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় ৬ জন, আইসিইউতে ২২ জন ও এইচডিইউ শয্যায় একজন।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৮১ জনের। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ১৪ হাজার ৩০৩ জন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, সাধারণত শীতকালে বাংলাদেশে করোনা রোগী কম থাকে। বর্তমানে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১-এর কারণে সংক্রমণের হার কিছুটা বেড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, শীত কমলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়তে পারে।

মুশতাক হোসেন বলেন, নতুন উপধরন মারাত্মক না হলেও এর সংক্রমণের হার অনেক বেশি। যাঁরা মেডিকেল বা হাসপাতালে কাজ করেন, যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, তাঁদের জন্য এখনো করোনা ঝুঁকিপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, এসব ব্যক্তির জন্য কোভিড মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, এখন যেহেতু টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যারা টিকা নেয়নি তাদের টিকা নেয়া জরুরি। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, যেমন—হাসপাতাল, গণপরিবহন বা যেখানে লোকসমাগম বেশি সেখানে মাস্ক পরা নিরাপদ।  

জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন ও জুলাই মাসের পর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের কয়েকদিন সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের ওপরে। ফলে মাস্ক পরার পরামর্শসহ চার দফা ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকারের করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

তারা বলছে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা, ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা, বৈশ্বিক সংক্রমণ পর্যালোচনা করে দেশে নজরদারি বাড়ানোসহ আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সব প্রস্তুতি রাখা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেছেন, আশঙ্কা না থাকলেও আমাদেরকে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। কারণ, দুই তিন মাস পরে হয়তো বাংলাদেশে করোনার মূল সিজন শুরু হবে। তখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে।

বর্তমান প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন এ বিষয়ে আমাদের সার্ভিলেন্স বাড়াতে হবে। কোন ধরনে কারা আক্রান্ত হচ্ছেন তা চিহ্নিত করতে হবে। যারা ডোজ পননি কিংবা এক ডোজ নিয়েছেন তাদেরকে বাকি ডোজগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণসহ চিকিৎসার গাইডলাইন আপডেট করতে হবে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল, বেড, অক্সিজেন এসব বিষয়ে প্রস্তুতি রাখতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, করোনা পরিস্থিতি ফের ঊর্ধ্বমুখী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ৫ জনের শরীরে নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে। সবাই সচেতন না হলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যেতে পারেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে বছর শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন। মৃত্যু হয় সাত হাজার ৫৫৯ জনের।

পরের বছর ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জন। মৃত্যু হয় ২০ হাজার ৫১৩ জনের। ওই বছরে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয় ২৮ জুলাই। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় চার লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। মৃত্যু হয় এক হাজার ৩৬৮ জনের। ২০২৩ সালে শনাক্ত হয় ৯ হাজার ১৮৯ জন। মৃত্যু হয় ৩৭ জনের।  

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত