নোয়াখালীতে ধর্ষণ ও নির্যাতন মামলায় ১০জনের মৃত্যুদণ্ড, ৬জনের যাবজ্জীবন
গত ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মধ্য বাগ্যা গ্রামে গৃহবধূ পারুল আক্তারকে (৪০) দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার রায় প্রকাশ করেছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ে রুহুল আমিন মেম্বার’সহ ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ৫০হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অপর ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এর রায় প্রদান করেন, জেলা ও দায়রা জজ ফাতেমা ফেরদৌস। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন, ইসমাইল হোসেনের ছেলে সোহেল (৩৮), আবদুল মন্নানের ছেলে স্বপন (৪২), আবুল কাশেমের ইব্রাহিম খলিল বেচু (২৫), ছিড়ু মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন আবু (৪০), ফকির আহাম্মদের ছেলে সালা উদ্দিন (৩২), খুরশিদ আলমের ছেলে রুহুল আমিন মেম্বার (৪০), মোহাহের হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২), আবদুল হাশেমের ছেলে হাসান আলী বুলু (৪৫), রফিক উল্যার ছেলে মুরাদ (২৮) ও চাঁন মিয়ার ছেলে জামাল প্রকাশ হেঞ্জু মাঝি (২৮)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন, ইসমাইল হোসেন বাগন আলীর ছেলে হানিফ (৩০), আবদুল হামিদের ছেলে চৌধুরী (২৫), আহাম্মদ উল্যার ছেলে বাদশা আলম বাসু প্রকাশ কুড়াইলা বাসু (৪০), তোফায়েল আহাম্মদের ছেলে মোশারফ হোসেন (৩৫), আরব আলী প্রকাশ গর্দানের ছেলে মিন্টু প্রকাশ হেলাল (৫৫) ও আবুল কালামের ছেলে সোহেল (২৮)। এদের মধ্যে মিন্টু প্রকাশ হেলাল ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি’সহ তাকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে, ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। তবে, রায় লেখা শেষ না হওয়ায় সেদিন আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেন। এ মামলায় বাদি পক্ষে ২৩ হন সাক্ষীর এবং আসামি পক্ষে ৫জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। ৮জন আসামি তাদের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ রায়ে খুশি বাদি’সহ তার পক্ষের আইনজীবী ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান ও তার আত্মীয়স্বজন। তারা রাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তবে এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ হালদার। সেইদিন যা ঘটেছিল: ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সুবর্ণচর উপজেলায় নিজের ভোটকেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে গেলে ১০/১৫ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে তাদের পছন্দের প্রতীকে সিল মারতে বলেছিলেন। এ নিয়ে ওই লোকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা। এরপর রাত ১২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে গিয়ে তাকেসহ তার স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে ফেলে। এরপর দুর্বৃত্তরা তাকে বেধড়ক পেটায় এবং টেনে হিঁচড়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। ওই নারীর অভিযোগ, দুর্বৃত্ত কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তারা তাকে গলা কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল। তিনি হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে জীবন ভিক্ষা চাইলে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা না করে ভোর ৫টার দিকে ফেলে রেখে চলে যায়। সকালে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বার’সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বিবার্তা/সবুজ/সউদ
নোয়াখালীতে ধর্ষণ ও নির্যাতন মামলায় ১০জনের মৃত্যুদণ্ড, ৬জনের যাবজ্জীবন
নোয়াখালী প্রতিনিধি
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত