বিপদে ইসি

| আপডেট :  ১১ জুন ২০২২, ১২:৫৮  | প্রকাশিত :  ১১ জুন ২০২২, ১২:৫৮

কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের নির্দেশে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার তাঁকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার অনুরোধ জানালেও তিনি গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এলাকায়ই ছিলেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনও তাঁর বিরুদ্ধে আর কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আগামীকাল রবিবারের আগে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।

সে রুলের অনুলিপি আমরা এখনো পাইনি। রবিবার সেটা সংগ্রহের চেষ্টা করব এবং তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’ অন্যদিকে এমপি বাহারও জানিয়েছেন, হাইকোর্টের রুল পর্যালোচনা করার পর তিনি নির্বাচনী এলাকা ছাড়বেন কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ’

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ছয়টি পৌরসভা ও শতাধিক ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে প্রশংসিত হয়। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ছিল ঝিনাইদহ পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিল, বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউপিতে নৌকার প্রার্থীর আচরণের জন্য ওই নির্বাচন স্থগিত, প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত এবং কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি বাহাউদ্দিন বাহারকে প্রথমে সতর্ক করে দিয়ে চিঠি ও পরে এলাকা ছাড়তে বলা হয়।

গত ৮ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রার্থী আবদুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিলের প্রজ্ঞাপন এক মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাঁর প্রার্থিতা কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে কমিশন আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দ্রুত আপিল করা হবে।

আইনে যা বলা আছে

‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধিমালা-২০১৬-এর ২২ বিধিতে বলা আছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনপূর্ব নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। ’

আর এ বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র।

বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে উক্তরূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তাঁর ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। ’ ২০১৬ সালের নভেম্বরে আচরণবিধিতে এই ধারা সংযোজন করা হয়েছিল।

আগের কমিশনের অবস্থান

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে কে এম নুরুল হুদার কমিশন এ নির্বাচনে এমপিদের নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ দিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধিমালা সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়। সে সময় কমিশনের আইন ও বিধি সংস্কার কমিটি সব এমপিকে এ সুযোগ দেওয়া হবে, নাকি সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিরাই এ সুযোগ পাবেন, তা নিয়ে একমত হতে পারেননি। পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরের এমপিরা এ সুযোগ পাবেন।

সে সময় নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য বাদে অন্য সবাই স্থানীয় এমপিদের নির্বাচনী প্রচারে সুযোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। কে এম নুরুল হুদা ২০১৮ সালের ২৯ মে বলেছিলেন, এখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে হলে দলীয় যাঁরা কর্মী, তাঁদের অংশগ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৩৬-৩৭ অনুচ্ছেদে সব নাগরিককে চলাফেরার ও সমাবেশের স্বাধীনতা দেওয়া আছে। সে কারণে একজন লোক জনপ্রতিনিধি হওয়ার কারণে কোনো মিটিংয়ে বা মিছিলে যেতে পারবেন না, কোনো ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে পারবেন না—এটা আমাদের কাছে সঠিক মনে হয়নি। এ ছাড়া সংসদ সদস্যরা সরকারি সুবিধাভোগী না। মন্ত্রী, মেয়র, হুইপ, স্পিকারের মতো তাঁদের কোনো দপ্তর নেই। তার পরও ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচারণায় তাঁদের নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। এ জন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় এমপিদের প্রচারের বাধা তুলে নিতে যাচ্ছি। পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে এই বিধান করা হবে।

এর আগে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল এমপিদের প্রচারের পক্ষে নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনের দাবি জানায়। কিন্তু নুরুল হুদা কমিশনের ওই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পায়নি।

নির্বাচনী এলাকা ছাড়েননি বাহার

জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকায় অবস্থিত নিজের বাসভবনের সামনে থাকা ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান করেন এমপি বাহার। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেলে নগরীর রামঘাট এলাকায় অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যান তিনি। সেখান থেকে রাতে নিজ বাসভবনে ফিরে আসেন।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা প্রসঙ্গে এমপি বাহার সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দেওয়া একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়েছে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত কমিশনের প্রতি একটি রুল জারি করেছেন। তবে এখনো উচ্চ আদালতের দেওয়া রুলের কাগজ আমরা হাাতে পাইনি। সেটি শনি বা রবিবার হাতে পেলে বিষয়টি বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে কথা বলব। ’

দলের বক্তব্য
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার। তবে এটাও ঠিক যে উনি (এমপি বাহার) বাড়ি ছেড়ে গেলে কোথায় যাবেন, সে সমস্যাটিও নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য এমপির বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এমন নজিরও আছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন এমপি বাহারের বিষয়টি জাতীয় সংসদের স্পিকারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলতে পারে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত