সুনামগঞ্জ হাওড়ে আটক ৩৪ শিবিরকে বুয়েট থেকে বহিষ্কারের দাবি

| আপডেট :  ৩১ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৮  | প্রকাশিত :  ৩১ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৮


সুনামগঞ্জ হাওড়ে আটক ৩৪ শিবিরকে বুয়েট থেকে বহিষ্কারের দাবি

বিবার্তা প্রতিবেদক


বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানোর পাশাপাশি সুনামগঞ্জ টাঙ্গুয়ার হাওড়ে রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের অপরাধে আটক ৩৪ জন শিবির ক্যাডারকে বুয়েট থেকে দ্রুত স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক আইনগত শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বুয়েট প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

৩১ মার্চ, রবিবার বিকাল ৪টায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এই আল্টিমেটাম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক কবীর চৌধুরী তন্ময়, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড. এইউজেড প্রিন্স প্রমুখ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সুনামগঞ্জ টাঙ্গুয়ার হাওড়ে রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক ৩৪ জন শিবির ক্যাডারকে বুয়েট থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক আইনগত শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় বুয়েটের প্রশাসনিক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

ত্যিনি বলেন, সুনামগঞ্জের স্থানীয় জামাতের আমির ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই ৩৪ জন শিবির ক্যাডারের মুক্তির দাবি করেছিল। এসব শিবিরের ক্যাডাররা জামিনে বের হয়ে এসে আবার বুয়েটকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অবিলম্বে এদেরকে গ্রেফতার করে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। বুয়েট প্রশাসন দাবি না মানলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মরা বুয়েটে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কমিটি দিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বুয়েট প্রশাসনকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে। বুয়েটকে জামাত-শিবির ও জঙ্গীদের অভয়ারণ্য হতে দিবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট অন্যায়ভাবে বাতিল করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, সুনামগঞ্জের হাওড়ে রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের অপরাধে আটক ৩৪ জন বুয়েটের শিবির ক্যাডাররা পরিকল্পিত ভাবে ২০২২ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে বাঁধা দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করেছিল। এখনও এদের বিচার হয়নি। জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকীর আলোচনা সভায় বাঁধা প্রদানকারী ৩৪ জন শিবির ক্যাডারকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার নিশ্চিত করাসহ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অন্যথায় বুয়েটের প্রশাসনিক কার্যালয় ঘেরাও করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

তিনি বলেন, বুয়েটে প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্রদল ও শিবিরের কমিটি থাকতে পারলে কেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটি থাকতে পারবে না? বুয়েট প্রশাসনকে অবশ্যই এধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণের জবাব দিতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ও মৌলবাদী সংগঠন ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সংগঠনগুলোকে বুয়েটে রাজনীতি করার সর্বোচ্চ সুযোগ নিশ্চিত করতে করার দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক কবীর চৌধুরী তন্ময় বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছিল স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরের জঙ্গি ক্যাডাররা। কিন্তু তখন বুয়েট প্রশাসন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। আরেক বুয়েট শিক্ষার্থী সনিকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা বিএনপি সরকারের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের ক্যাডাররা। তখনও বুয়েট প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। হঠাৎ কেনো তারা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিলো? তারা কি বুয়েটে জামাত-শিবির-জঙ্গিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়? সকল প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি চর্চা বন্ধ করে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী জামাত-শিবিরের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার জন্যেই এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল বুয়েটে কমিটি দিয়েছে। এ বিষয়ে বুয়েট নীরব কেন? বুয়েট প্রশাসনকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। জামাত-শিবির জঙ্গি সংগঠনগুলো সবসময় রাজনীতি করে অন্ধকারে। বুয়েট প্রশাসন এসব প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে।

সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, বুয়েট এখনও পাকিস্তানি অধ্যাদেশে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বুয়েটের যাত্রা শুরু। তৎকালীন সময়ে দেশ ছিল স্বাধিকারের দাবিতে উত্তাল। ফলে স্বৈরশাসক আইয়ুব সরকার তার নীলনকশার আলোকে বুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করলেও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখে। এমনকি মিছিল-সমাবেশসহ অনেক অনেক ছোট ছোট বিষয়ও নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে দেওয়া হয়েছিল নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। এরপর দেশ স্বাধীন হলে সরকারি চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ১৯৭৩ সালে আলাদা আইন হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আইন করার কথা ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে  বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘসময়। সেই আইন আর হয়ে ওঠেনি। ১৯৭৫ থেকে ২০১৯। কখনো শুনিনি কোথাও উচ্চারিত হয়েছে বুয়েটের পাকিস্তানি অধ্যাদেশ সংশোধনের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরেও পাকিস্তানি অধ্যাদেশে চলা বুয়েট থেকে কখনোই পাকিস্তানি ভূত নামেনি।

তিনি আরো বলেন, কয়েকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল বুয়েটে অধিকাংশ সময় ওড়েনা জাতীয় পতাকা। বিভিন্ন হল ও ইনস্টিটিউটের সামনে পতাকার স্ট্যান্ড থাকলেও সেখানে পতাকা ওড়েনা। ১৯৬২ সালের পাকিস্তানি ভাবধারার অধ্যাদেশ বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে সভা ও সমাবেশ করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু বুয়েট প্রশাসন এদেশের সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত হয়ে আসছে। বারবার দাবি করা সত্ত্বেও আজও পর্যন্ত সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বুয়েট প্রশাসনের নিকট দাবি, অবিলম্বে বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট অন্যায়ভাবে বাতিল করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

বিবার্তা/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত