অধ্যক্ষপুত্রের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় বাধ্যতামূলক চাঁদা চেয়ে নোটিশ!

| আপডেট :  ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৬  | প্রকাশিত :  ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৬


অধ্যক্ষপুত্রের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় বাধ্যতামূলক চাঁদা চেয়ে নোটিশ!

সারাদেশ

বিবার্তা প্রতিবেদক


অধ্যক্ষপুত্রের বিবাহোত্তর বৌভাত অনুষ্ঠানে বাধ্যতামূলক চাঁদা চেয়ে ২৪ জুন ২০২৪ তারিখে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশটি দিয়েছে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রধান সহকারী মামুন।

জানা যায়, চলতি বছরের ১২ জুলাই বেইলী রোডস্থ অফিসার্স ক্লাবে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসীন কবিরের ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা উপলক্ষ্যে অত্র কলেজের প্রধান সহকারীর স্বাক্ষরিত নোটিশে কলেজের সকল কর্মচারীকে আগামী ৫ জুলাইয়ের মধ্যে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা শুভেচ্ছা উপহার চেয়ে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। টাকাটি অত্র কলেজের ক্যাসিয়ার মো. আবুল হোসেনের নিকট জমা দিতে অনুরোধ করা হয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এতদ্বারা অত্র কলেজের সকল কর্মচারীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ১২ জুলাই ২০২৪ তারিখ, সন্ধ্যা ৭.০০ টায় নগরীর বেইলী রোডস্থ অফিসার্স ক্লাবে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়ের পুত্রের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত আয়োজনে আপনি নিমন্ত্রিত। এ উপলক্ষ্যে সকল কর্মচারীকে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে ৫০০/-(পাঁচশত টাকা মাত্র) অত্র কলেজের ক্যাশ সরকার জনাব মো. আবুল হোসেনের নিকট আগামী ০৫/০৭/২০২৪ তারিখ বৃহস্পতিবারের মধ্যে জমাদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দী কলেজ পরিবার গ্রুপে পোস্ট দিয়ে বলেন, অধ্যক্ষ মহোদয়ের ছেলের মুসলমানিতে সাধারণ কর্মচারী থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা নিবেন। আর কত ছোট লোকি কাজ করবেন। একজন স্টাফ ৭০০০/৮০০০ টাকা বেতন পায় তার থেকে আপনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাবদ টাকা নেন। যেদিন থেকে আপনি কলেজে যোগদান করছেন সেদিন থেকে কলেজের রেজাল্ট ভালো না। মহসিন স্যার পারলে গবিব স্টাফদের মুক্তি দেন না হয় পদত্যাগ করেন।

কলেজের একজন কর্মচারী নিজেকে নিরীহ দাবি করে চোখে মুখে রাজ্যের অসহায়ত্ব নিয়ে বলেন, ভাই উনারা বলেছেন টাকা না দিলে নাকি আমাদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। আমরা কী করবো, আমাদের করার কিছু নেই!

আরেক কর্মচারীকে ফোন দিলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান এবং বলেন এ বিষয়ে প্রধান সহকারীর সাথে সরাসরি কথা বলতে। আরেক কর্মচারী বলেন, নোটিশে বাধ্যতামূলক কথাটি লেখা ঠিক হয়নি। কলেজের  অধ্যক্ষ স্যারের ছেলে বিয়ে আমাদের দাওয়াত করেছে আমরা তো এমনিই খুশি। এখানে ৫০০ টাকা কোনো বিষয় না।

উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান অফিস সহকারী  মামুন বিবার্তাকে বলেন, আপনি কি আমদের স্টুডেন্ট, কলেজ আসেন কথা বলি।

তিনি আরো বলেন, আসলে এটা তো সমাজিক প্রথা, সাধারণ কর্পোরেটে এভাবে হয়।

বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি আবারো বলেন, আসেন কলেজে সামনা সামনি কথা বলি। আমি টেলিফোনে এত কথা বলতে রাজি না বলে ফোন কেটে দেয়। তারপর তাকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে অধ্যক্ষ মোহসীন কবির বিবার্তাকে বলেন, আমি মাত্রই বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং সাথে সাথে প্রধান সহকারীকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কেন এমন নোটিশ দেওয়া হলো? উত্তরে প্রধান সহকারী বলেন আমরা প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই এমন করে থাকি, যারা পারে তারা দেয়! বাধ্যতামূলক দিতে হবে এমন লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, এটা হয়তো তার ভুল হয়েছে, তবে আগামীকাল অফিসে গিয়ে আমি তাকে শোকজ করব। জানতে চাইবো কেন সে এমনটি করেছে! সে যদি এবিষয়ে কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে থাকে- তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছেলের বিয়ের বিষয়ে অধ্যক্ষ সাংবাদিককে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আপনার কি মনে হয় আমি ৫০০ টাকার জন্য আমার ছেলের বিয়ের আয়োজন করেছি, অবশ্যই না। উল্টো সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিয়েতে কেউ যাতে কোনো উপঢৌকন না নিয়ে আসে।

বিবার্তা/সাগর/এসবি/রোমেল

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত