‘কোটা আন্দোলনে ভর করে অপশক্তিকে নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ দেয়া যাবে না’

| আপডেট :  ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫২  | প্রকাশিত :  ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫২


‘কোটা আন্দোলনে ভর করে অপশক্তিকে নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ দেয়া যাবে না’

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল, সেটি পূরণ হয়ে গেছে। এখন আর আন্দোলন করার কিছু নাই। আন্দোলনের উপর ভর করে অপশক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করছে। শিক্ষার্থীদের আহবান জানাবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানকে আপনারা গ্রহণ করুন। অপশক্তিকে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির আর সুযোগ দেয়া যাবে না।

শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্তরালে অপশক্তির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়েছে। এর পেছনে অপশক্তি ও কুশীলবরা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের না পেলে শিক্ষকদের অস্তিত্ব থাকে না। এই ঘটনার দায় সরকার নিতে হবে। তবে উদ্ভুত সংকট নিরসনে সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। এর আগে সব ধরনের সহিংসতা পরিহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন গণভবনের দরজা শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা। এই সুযোগ শিক্ষার্থীদের নিতে হবে। কিভাবে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে হয় শিক্ষার্থীরা তা আমাদের দেখিয়ে দিলো।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহবান থাকবে তারা যেনো নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। এখান থেকে তারাই ফিরবে না যারা দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চায় না। এখন ভিন্নমাত্রার আন্দোলন হচ্ছে, সেখানে নতুন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হচ্ছে। কারা এসব যুক্ত করছে সরকারকে তা চিহ্নিত করতে হবে।

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা শান্তি চাই। যে উদ্দেশ্যে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিলো সেটি পূরন হয়ে গেছে। এখন আর আন্দোলন করার কিছু নাই। তবে যারা নিহত হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে বিচার করতে হবে।  প্রধানমন্ত্রী সেই প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। আন্দোলনের উপর ভর করে অপশক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করছে। অপশক্তি যেনো এই আন্দোলনে ভর করে দেশের আর কোনো ক্ষতি করতে না পারে।  ছাত্ররা তোমরা শান্ত হয়ে তোমাদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাও। তোমাদের আরও কোনো দাবি থাকলে তোমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তা উপস্থাপন করতে পারো। উনি অবশ্যই ন্যায়বিচার করবেন।

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়রে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আহমেদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা তাদের জীবন দিয়েছেন তাদেরকে আমরা স্মরণ করছি। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বলছেন যারা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে তাদের আমরা শনাক্ত করেছি এবং যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা। দেশবাসী হিসেবে আমরা আসলে শান্তি চাই। ছাত্রদের আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কতগুলো তাজা প্রাণ গিয়েছে।

তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইন মেনে চলা উচিৎ সবার আগে। সব আন্দোলনেই পর্দার আড়ালে তৃতীয় শক্তি কাজ করে। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো গুজব ও অপপ্রচার। আমরা যেনো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কানির মধ্যে ঠেলে না দেই। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সার্বিক সমন্বয় করে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, এই আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সরকারি হিসেবে ১৫০ জন নিহত হয়েছে। ভাসানীকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। উনি কিন্তু পাকিস্তানকে ওয়ালাইকুম সালাম বলেছিলেন। কিন্তু উনি জাতীয় পতাকা আনতে পারেন নাই। দেশকে জাতীয় পতাকা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সবার, আর এই ছাত্ররা আমাদের।

তিনি বলেন, আমরা দেশপ্রেমের কথা বলতে এখানে এসেছি, সরকারের কথা বলতে আসিনি। মুক্তিযোদ্ধারা কোটার জন্য যুদ্ধে যায়নি। স্বাধীনতার জন্য  অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়েছিল। আমি যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের মাথায় জাতীয় পতাকা দেখি সেটি আমাকে ভাবায়। সংকট নিরসন কি শেখ হাসিনার একার দায়িত্ব? কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বিব্রত করলাম? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ উনি সবাইকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। তবে দল থেকে আগাছা পরিষ্কার করার এখনই সময়।

সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, প্রথমদিকে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছিল। সরকার পর্যবেক্ষণ করছিল। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্ররা তাদের দাবী উপস্থাপন করছিল। এই ছাত্রদেরকে কারা সহিংসতার দিকে নিয়ে গেল তা এখনো জাতির সামনে স্পষ্ট নয়। ঘটনার পেছনে আরো ঘটনা আছে। ছাত্রদের আন্দোলনের উপর ভর করে অন্য উদ্দেশ্য হাসিলের প্রক্রিয়া চলছিল। ছাত্রদেরকে কেউ না কেউ সামনে নিয়ে আসছে। সেই অপশক্তিটা কারা? ছাত্রদের আন্দোলনটাকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অতি উৎসাহী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। পাশাপাশি যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদেরও বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আজ এখান থেকে এই আন্দোলনের পিছনে কারা আছে তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত করতে হবে। গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমরা জানতে চাই। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহবান জানাই, ছাত্রদের শান্ত করার জন্য আপনি শিক্ষকদের দায়িত্ব দেন। ছাত্রদের দাবি শোনার জন্য আমি শিক্ষকদের কমিটি করে দেওয়া হোক। নিষিদ্ধ করে সব শেষ হয় না। যাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা কি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে? আজ এবং গতকালের আন্দোলনে সেই নিষিদ্ধ সংগঠন এর অনেকই উপস্থিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই যে প্রত্যয় স্কিম আজ বাতিল করা হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের আহবান করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানকে আপনারা গ্রহণ করুন। অপশক্তিকে সুযোগ করে দিয়েন না।

আলোচনা সভার শুরুতে কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন এবং অনুষ্ঠান শেষে নিহতদের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করা হয়।

বিবার্তা/সোহেল/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত