চুক্তিছাড়া যেতে সিএনজি চালকদের যত অজুহাত

| আপডেট :  ১১ নভেম্বর ২০২১, ০১:০০  | প্রকাশিত :  ১১ নভেম্বর ২০২১, ০১:০০

সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য থামছে না। যাত্রীদের জিম্মি করে চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন। মিটার থাকলেও চুক্তিছাড়া নড়েন না একজনও। যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে রাজি না হওয়ার হাজারো অজুহাতও রয়েছে তাদের। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

পান্থপথ থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যেতে সোহাগ চৌধুরী সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলেন। কোনো চালক মিটারে যেতে রাজি হননি। তারা চুক্তিতে যেতে রাজি এবং কেউ কেউ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আবার কেউ ৩৮০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হাঁকেন। নিরুপায় হয়ে ৩৪০ টাকার চুক্তিতে সোহাগ গন্তব্যে যান। তিনি বলেন, অটোরিকশায় উঠার পর চালক মিটার চালু করেন। গন্তব্যে পৌঁছার পর দেখা গেল মিটারে লাল রঙে ঝলঝল করছে ১৪০ টাকা। অথচ তাকে গুনতে হলো দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া।

গাবতলী বাস টার্মিনালের পাশে সিএনজি অটোরিকশা খুঁজছেন আবুল কালাম। তিনি বনানী কাঁচাবাজার এলাকায় যাবেন। অটোরিকশা থাকলেও চালকদের কেউ মিটারে যেতে রাজি হলেন না। চুক্তিতে তারা ৪০০ টাকা ভাড়া হাঁকেন। চালকদের অজুহাত- ব্যাপক যানজটে মিটারে গেলে তাদের পোষাবে না। সিএনজি অটোরিকশায় না গিয়ে কালাম উবারের মোটরসাইকেল অ্যাপে কল করেন। তিনি বলেন, উবারের অ্যাপে বিল দেখাচ্ছে ১৬৮ টাকা। তিনি বলেন, এতে আমার ২০০ টাকার বেশি বাঁচবে।

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কুড়িল বিশ্বরোডে আসতে সিএনজি অটোরিকশা খুঁজছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ। এজন্য সিএনজি চালকরা তার কাছে ২৫০ টাকা ভাড়া হাঁকেন। এর কমে আসতে কেউই রাজি হননি। যুগান্তরকে শহীদুল্লাহ বলেন, সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া বেশি চাওয়ায় পরে ৩০ টাকা দিয়ে রাজধানী পরিবহণের বাসে গন্তব্যে পৌঁছেছি।

প্রগতি সরণির বিভিন্ন স্থানে সাতজন সিএনজি অটোরিকশা চালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা হয়। তাদের কেউ মিটারে যেতে রাজি হননি। চুক্তিতে যেতে চাইলে তারা মিটারের ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া হাঁকেন। পুরানা পল্টন যেতে চাইলে সিএনজি চালক আব্দুল জলিল ৩৫০ টাকা ভাড়া চান। মিটারে আসা ভাড়ার চেয়ে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি মিটারে যেতে রাজি হননি। শাহবাগে যেতে চাইলে আরেক চালক আব্দুর রহমান ৩৫০ টাকা ভাড়া চান। তিনিও মিটারে যেতে চাননি। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং যেতে আড়াইশ টাকা ভাড়া চান চালক হৃদয় হাসান। দেড়শ টাকা দিতে চাইলে তিনি অনেকটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘এয়ারপোর্ট গেলেই তো ২০০ টাকা দেয়।’ পঞ্চগড়ের হৃদয় হাসান তিন বছর ধরে ঢাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালাচ্ছেন। তিনি জানান, মিটারে গেলে পোষায় না। প্রতিদিন এক হাজার ২০০ টাকা জমা দিতে হয়। এরপর দিনের খরচ শেষে ৬০০-৭০০ টাকা নিয়ে বাসায় ফেরা যায়।

ছয় বছর ধরে ঢাকায় সিএনজি অটোরিকশা চালাচ্ছেন আজমল আলী। তিনি বলেন, ‘কে নিয়ম মানে বলেন তো। আমাদের মালিকও তো সরকারের বেঁধে দেওয়া জমার নিয়ম মানেন না। আমি মিটারে চালামু কেন?’ তিনি বলেন, মিটারে চালালে সারা দিনেও জমার টাকা উঠবে না। চালক সালেক মিয়া যুগান্তরকে বলেন, যানজটে মিটারে যেতে চাই না। তিনি বলেন, একটি সিগন্যালে আটকা পড়লে সারা দিনের লাভ খেয়ে নেয়। খুবই কঠিন দিন পার করছি আমরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনের বাইরে এসেই যাত্রীদের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সিএনজি চালকদের হাতে তাদের নাজেহাল হতে হয়। বাগ্বিতণ্ডায়ও জড়াতে হয়। সিএনজি অটোরিকশায় মিটার ব্যবহারের কোনো বালাই নেই। চালকরা যোগসাজশ করে একইরকম ভাড়া হাঁকেন। ধূসর রঙের ব্যক্তিগত মালিকানার অটোরিকশায় (প্রাইভেট) যাত্রী পরিবহণের অনুমতি নেই। কিন্তু ইচ্ছেমতো ভাড়ায় তাতেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার চালকদের দাবি- পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে তারা রাজপথে অটোরিকশা চালান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, মিটারে না গিয়ে চুক্তিতে যাওয়ার কোনো ঘটনা নজরে এলে আমরা ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত চালকদের কেউ কেউ মিটারে যেতে চান না। এ সুযোগ সবাই নিতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার বিষয়ে তিনি বলেন, আদালতে এ ব্যাপারে রিট হয়েছিল। এরপর এসব অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনো বহাল আছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সিএনজি অটোরিকশা চালকরা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সিএনজি অটোরিকশার সর্বশেষ ভাড়া বাড়ানোর সময় আমরা সরকারকে বলেছিলাম, বাড়তি ভাড়ায়ও অটোরিকশাগুলোকে মিটারে চালাতে যাতে বাধ্য করা হয়। ভাড়া বাড়ানো হলো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। মিটারে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও চালকরা তা প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সমীক্ষায় জানা গেছে, মিটার উপেক্ষা করে চুক্তিতে বাড়তি ভাড়া নিয়ে ৯৬ শতাংশ অটোরিকশা চালক যাত্রী পরিবহণ করেন।

সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত