পদ্মা সেতুতে ১২৭১ কোটি টাকা টোল আদায়: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

| আপডেট :  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:১৭  | প্রকাশিত :  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:১৭


পদ্মা সেতুতে ১২৭১ কোটি টাকা টোল আদায়: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

বিবার্তা ডেস্ক


পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন হতে চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৭ ফেব্রুয়ারি, বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা বহুমুখী সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পরদিন ২৬ জুন। উদ্বোধনের পর থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন হতে চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে।

তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত এক বছরে সেতু থেকে আয় হয়েছে প্রায় আটশো কোটি (৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার) টাকা। দৈনিক গড় আয় প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

কর্মসংস্থান হয়েছে শ্রম শক্তির প্রায় ১ দশমিক ০৪ শতাংশ। দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবছর ১ দশমিক ০১ ও সারা দেশে ০ দশমিক ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ ও সামগ্রিকভাবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। যোগাযোগের জন্য ট্রান্স এশিয়ান রেল ও সড়ক এ সেতুর মাধ্যমেই যুক্ত হবে। ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের মাধ্যমে বাণিজ্য ও শিল্পায়ন ও পর্যটন ত্বরান্বিত হবে বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।

লিখিত প্রশ্নের উত্তরে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক জীবন চিত্র পাল্টে দিয়ে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত চার বছরে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে এক হাজার ৯৬৭টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২৪১ জনকে।

অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শাজাহান খানের প্রশ্ন ছিল- ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর হতে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও তার দোসররা নির্বাচন প্রতিহতের নামে অযৌক্তিক ও জনসম্পৃক্ততাহীন আন্দোলনের মাধ্যমে আগুন-সন্ত্রাস, নিরীহ মানুষ ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা এবং জনগণের সম্পদ বিনষ্ট করার অশুভ খেলায় মেতে উঠেছিল। এই অশুভ শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানকেই অস্বীকার করছে না, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার যে জনবান্ধব ধারার সৃষ্টি হয়েছে, তা বানচাল করে অতীতের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইছে। বাংলাদেশকে তারা আবারও উগ্র জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-লুটপাটের সেই দুঃসহ দিনগুলোয় ফিরিতে নিতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর হতে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নামে বিএনপি-জামাত সন্ত্রাসীদের হাতে ১৮৮ জন নিহত ও চার হাজার ৯৭৩ জন আহত হয়। এসব নাশকতার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে এ সময়ে আট হাজার ১০৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৯৬৭টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এতে এক হাজার ২৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর হতে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিষয়ে তদন্ত কাজ চলমান বলেও তিনি জানান।

এছাড়া, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ছয় শতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়েছে এবং তাদের নাশকতায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলমান বলেও জানান তিনি।

জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুল্লাহর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর ২৮ অক্টোবর থেকে এ ধরনের সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ছয় শতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৪টি যাত্রীবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান বা মালবাহী লরি বা কনটেইনার, তিনটি সিএনজি, চারটি প্রাইভেট কার ও ১১টি পিকআপ ভ্যান রয়েছে। পাঁচটি ট্রেন হলো- যমুনা এক্সপ্রেস: ঢাকা কমিউটার, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও টাঙ্গাইল কমিউটার। এ ছাড়া রয়েছে ১৫টি মোটরসাইকেল, তিনটি লেগুনা, একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস (মধ্যরামপুরা, ফেনী) ও একটি অটোরিকশা। এ ছাড়া একটি উচ্চ বিদ্যালয়, ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি বসতঘর, একটি বৌদ্ধ মন্দির একটি নৌকাসহ সর্বমোট ৩২৮টি যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধে ড্রাইভার, হেলপার, পুলিশ, বিজিবি, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোক নিহত হয়েছেন, আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। বিএনপি ক্যাডাররা অসংখ্য যানবাহন জ্বালিয়ে দিয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতার ঘটনায় সারাদেশে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন নয়জন। বিজিবির দুইজন আহত হয়েছেন এবং একটি রিকুইজিশন করা যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায়  আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বিআরটিসি বাস ডিপোর বাস রক্ষা করতে গিয়ে এক আনসার সদস্য ইট পাটকেলের আঘাতে আহত হন। দুই আনসার সদস্য হোসেন আলী ও সুমন আলী বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন। তাদের বাহিনীর পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা ও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, অগ্নি-সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে দক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম চলমান।

বিবার্তা/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত