পিআরএল ও এলপিআরের যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে রাখা আবশ্যক

| আপডেট :  ১৫ মার্চ ২০২২, ১১:১৬  | প্রকাশিত :  ১৫ মার্চ ২০২২, ১১:১৬

ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের পর এলপিআর-এর প্রচলন ছিল, যা এখন আর নেই।২০১৫ সালে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণায় এলপিআর তুলে নতুন পদ্ধতি পিআরএল ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত করা হয়েছে।

সরকারি কর্মচারি অবসর গ্রহণ আইন, ১৯৭৪ এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী চাকরির ২৫ বছর পূর্তিতে একজন সরকারি কর্মচারি যদি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন, তবে তিনি অবসরজনিত সকল সুবিধা পাবেন।

অনেকের মনেই প্রশ্ন, এই এলপিআর এবং পিআরএল কী এবং দুটো পদ্ধতিতে কী ধরনের পার্থক্য রয়েছে?

এলপিআর এবং পিআরএল কী?
এলপিআর হল লিভ প্রিপারেশন ফর রিটায়ারমেন্ট বা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি। মূলত সরকারি চাকরি থেকে পূর্ণ অবসর গ্রহণের আগে এই ছুটি দেয়া হতো।এই সময়ের মধ্যে ওই কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার পেনশন, গ্র্যাচ্যুইটি গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকতেন।

অন্যদিকে পিআরএল হল পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ বা অবসর পরবর্তী ছুটি। বর্তমানে সব সরকারি চাকরিজীবীকে এলআরপি-এর পরিবর্তে পিআরএল সুবিধা দেয়া হয়।

আগে এক বছর ছুটি ভোগের পর একজন সরকারি কর্মচারী পূর্ণ অবসর গ্রহণ করতেন, আর বর্তমানে একজন সরকারি কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর এক বছর ছুটি ভোগ করেন। সহজ করে বললে এলপিআর হল অবসর গ্রহণের আগে ছুটি কাটানো এবং পিআরএল হল অবসর গ্রহণের পর ছুটি কাটানো।

এলপিআর চলাকালীন অর্থাৎ একজন কর্মচারী যতদিন ছুটি চলছে, সেই সময়ের মধ্যে তিনি অন্য কোন সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারতেন না।তাদের চুক্তিভিত্তিক পদায়নের সুযোগ ছিল না।

এমনকি এলপিআর চলাকালীন চাকরি করতে গেলে বা বিদেশ ভ্রমণেও তাদের সরকারের থেকে অনুমতি নেয়া লাগতো। কিন্তু পিআরএল-এর আওতায় সরকারি কর্মচারীর স্বাধীনতা আগের চাইতে বেড়েছে।পিআরএল চলাকালীন অবস্থায় একজন সরকারি চাকরিজীবী অন্য কোনো চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন।

সরকারি যেকোনো পদেও তার চুক্তিভিত্তিক পদায়নের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সরকারের কোন অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ছুটি বাতিল সাপেক্ষে যোগদান করতে হয়।

উভয় ক্ষেত্রে ছুটি বলতে অর্জিত ছুটি বোঝানো হয়েছে। যদিও সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর তাকে প্রজাতন্ত্র বা রাষ্ট্রের অন্য কোনো কাজে কোনো উপায়ে পুনরায় নিয়োগ করা যাবে না।

তবে শর্ত থাকে যে, সাংবিধানিক কোনো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না। রাষ্ট্রপতি, একজন কর্মচারীকে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর, জনস্বার্থে সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করতে পারবেন।

তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর পিআরএল ওই চাকরি থাকাকালীন স্থগিত থাকবে এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শেষ হওয়ার পর তার অবশিষ্ট ছুটি ও সংশ্লিষ্ট সুবিধা তিনি ভোগ করতে পারবেন।

এলপিআর ও পিআরএল দুটি পদ্ধতিতেই সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের ছুটি চলাকালীন ১২ মাস মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, এবং যদি শিক্ষা ভাতা চালু থাকে, সেটাও পেয়ে থাকেন।

ছুটি শেষে তারা পেনশন-গ্র্যাচুয়িটি পান। সব মিলিয়ে তারা ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ গ্রহণ করতে পারেন।

দুটি পদ্ধতিতেই একজন কর্মচারীর ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ এক বছরের ছুটি এবং সর্বোচ্চ ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুযোগের কথা বলা আছে।

যেমন কোন কর্মচারী সর্বোচ্চ এক বছর ছুটি কাটাতে পারবেন। এরপর তার চাকুরীজীবনে যদি অন্যান্য ছুটি জমা থাকে, তাহলে তার বিপরীতে তিনি টাকা তুলে নিতে পারবেন।

বেতনভাতার পাশাপাশি দুটি পদ্ধতির আওতায় বছর শেষে একটি ইনক্রিমেন্টও পান সরকারি চাকরিজীবীরা।

২০১১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়ায় সরকার। সে সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কর্মচারীরা ৬০ বছর পূর্তিতে অবসর গ্রহণ করতে পারেন।

যারা এলপিআরে ছিলেন, ২০১৫ সালে তাদের সবাইকে পিআরএল-এর আওতায় আনার কারণে সবাই এই বয়স বাড়ানোর সুবিধা ভোগ করতে পারছেন।

এলপিআরে থাকতেই পিআরএলে যাওয়া
একজন সরকারি চাকরিজীবী চাইলে তার ছুটির এই পদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারেন। অনেকেই এলপিআরে থাকতেই পিআরএলে যেতে চান এবং গিয়েও থাকেন।

সেক্ষেত্রে পেনশন, আর্থিক সুবিধা, অবসরের তারিখ, এলপিআর শুরুর তারিখ এবং চূড়ান্ত অবসর শুরুর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পেনশন, আর্থিক সুবিধা ও অবসরের সময়সীমা নিয়ে জটিলতা দেখা যায়।

এই বিভ্রান্তি দূর করতে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

সেখানে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীরা এলপিআরকে পিআরএলে পরিবর্তন করলে, তিনি যতদিন পিআরএল-এর আওতায় থাকবেন, সেই সময়সীমা পেনশনযোগ্য হবে না।

তবে ওই সরকারি চাকরিজীবী এলপিআরে থাকার সময় যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য, পিআরএলে গেলেও তা বজায় থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, ‘ক’ এর জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারি। ‘ক’ এর ৫৯ বছর পূরণ হবে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং ওইদিন তিনি অবসরে যাবেন।

ছুটি পাওনা সাপেক্ষে ‘ক’-এর পিআরএল শুরু হবে অবসরে যাওয়ার পর দিন অর্থাৎ ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ‘ক’ ১২ মাস পিআরএল ভোগ করলে তার ছুটি শেষ হবে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং তার চূড়ান্ত অবসরে যাওয়ার তারিখ হবে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি। তবে পিআরএল ভোগ না করলে ‘ক’ এর চূড়ান্ত অবসরে যাওয়ার তারিখ হবে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

সূত্র-বিবিসি

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত