ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার বিষয়ে যা বলছে ভারত

| আপডেট :  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৩  | প্রকাশিত :  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৩


ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার বিষয়ে যা বলছে ভারত

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


পদ্মার উজানে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যার শঙ্কা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন আসছে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২৬ আগস্ট, সোমবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শ্রী রণধীর জয়সওয়াল বলেন, আমরা ফারাক্কা ব্যারাজের গেট খোলার খবর দেখেছি। গেট খোলায় স্বাভাবিক গতিপথে নদীর ভাটিতে গঙ্গা/পদ্মায় ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হবে। এটি একটি স্বাভাবিক মৌসুমী অবস্থা। যা উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ঘটে থাকে।

এতে আরও বলা হয়, ফারাক্কা একটি ‘ব্যারেজ’ কেবল, ‘ড্যাম‘ নয়। পানির স্তর উপরে উঠে গেলে এটি প্রবাহিত হতে থাকে। ফারাক্কা খালে ৪০ হাজার কিউসেক পানি সরানোর জন্য এটি নিছক একটি কাঠামো, যা প্রধান গঙ্গা/পদ্মা নদীর ওপরের গেটগুলোর একটি সিস্টেম ব্যবহার করে সাবধানতার সঙ্গে করা হয়।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, প্রটোকল অনুযায়ী নিয়মিত ও সময়মতো যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাঁধ খুলে দেয়ার তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

সবশেষে বলা হয়েছে, আমরা ভুয়া ভিডিও, গুজব এবং ভয় দেখিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে দেখেছি। সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে এর মোকাবিলা করা উচিত।

এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রবল বৃষ্টি আর বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে পানি ছাড়ার কারণে চাপ বাড়ছে ফারাক্কা ব্যারেজে। পানি ছাড়তে হচ্ছে এই ব্যারেজেও। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় দৈনন্দিন পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ছে। যদিও বাকি সময়ে আপস্ট্রিমে পানি যেমন থাকে, সেই অনুযায়ী পানি ছাড়া হয় ডাউনস্ট্রিমে। গঙ্গার পানিস্তর বেড়ে যাওয়ায় ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে।

এদিকে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যার কবলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল। বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখও মানুষ। প্লাবনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৩ জন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে।

এদিকে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে সোমবার সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৮ মিটার। সেটি বেড়ে সন্ধ্যা ৬টায় হয়েছে ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। অর্থাৎ, ওই সীমা ছাড়িয়ে গেলে বন্যা বলা যাবে।

তিনি বলেন, ফারাক্কা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ার যে কথা শোনা যাচ্ছে, তার প্রভাব এখনো পদ্মায় পড়েনি। সেই পানি রাজশাহীতে আসতে সময় লাগবে। আগামীকাল থেকে তার প্রভাব বোঝা যেতে পারে।

এনামুল হক বলেন, ভারতে বন্যা বেশি হলে ফারাক্কা হয়ে বেশি পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এটাই স্বাভাবিক। পদ্মায় পানি বাড়লে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়। বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

ফারাক্কা ব্যারেজ খুলে দেওয়ার বড় কোনো প্রভাব এখনই বাংলাদেশে পড়বে না বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানও।

তিনি বলে, ফারাক্কা ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় পানি অনেক বাড়বে সেরকম কিছু এখনই দেখছি না। গঙ্গা অববাহিকায় নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী পাঁচ দিনেও স্থিতিশীল থাকবে বলেই ধারণা করছি। এখনই পানি বিপদসীমায় যাবার ঝুঁকি আপাতত নেই।

ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার বিষয়ে ভারত থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়েছিল কি না– সেই প্রশ্নে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ফারাক্কার যে গেটগুলো খুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, এগুলো আগে থেকেই খোলা ছিল, মুনসুনে সব বাঁধই এরকম খোলা থাকে। এক্ষেত্রে কোনো পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয় না। আমরা যেমন আমাদের তিস্তা ব্যারেজ খুলে দিই, তেমন অন্য ব্যারেজগুলোও খোলা থাকে। আমরা খোঁজ নিয়েছি রাজশাহীতে। ওখানে ওয়াটার লেভেল সেইমই আছে।

বিবার্তা/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত