বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সুর

| আপডেট :  ১৮ জুন ২০২২, ০৮:১৮  | প্রকাশিত :  ১৮ জুন ২০২২, ০৮:১৮

বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের কোনো পক্ষ নেই বলে দাবি করেছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ভোট নেই (বাংলাদেশের নির্বাচনে)। আমরা কোনো নির্দিষ্ট দল বা মঞ্চ বা অন্য কোনো কিছুকে সমর্থন করি না। সমর্থন করা আমাদের দায়িত্ব নয়।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা যা দেখতে চাই তা সব বাংলাদেশিই দেখতে চায়। আর তা হলো আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন। কোনো ধরনের সহিংসতা ও জোরজবরদস্তি ছাড়াই সেখানে অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় পরবর্তী নেতা নির্বাচনে জনগণ সুযোগ পাবে। ’

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আয়োজিত ‘অ্যামটক’ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ কথা বলেন। গতকাল প্রচারিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু উদ্বেগ আছে। আর এসব বিষয়ে কথা বলতে আমরা লজ্জা পাই না। ’

এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেন। তার প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, সাংবাদিকদের উচিত মার্কিন দূতকে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা। গতকাল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ‘অ্যামটক’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা। আগে ধারণ করা অনুষ্ঠানটি গতকাল বিকেলে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এরই মধ্যে বলেছেন, তিনি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাবেন। তিনি বলেন, কোনো গণতন্ত্রই পুরোপুরি যথার্থ নয়। তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনও আরো যথার্থ হওয়ার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনেক মামলা হয়েছে। এর পরও যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।

বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করার সময় তা ফিরে পাওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল ওয়াশিংটন। বাংলাদেশ সেই শর্তগুলো এখনো পূরণ করতে না পারায় জিএসপি ফিরে পায়নি। শর্ত পূরণ না করেই বাংলাদেশ জিএসপি চায়।

রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ বিস্মিত হওয়ার যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাতে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রও বিস্মিত হয়েছে। মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালেই র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এ ছাড়া বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনগুলোতে র‌্যাবের ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্বেগের কথা তুলে ধরে আসছিল।

রাষ্ট্রদূত বলেন, নিষেধাজ্ঞা কিভাবে প্রত্যাহার হতে পারে তা-ও বাংলাদেশকে বলা হয়েছে। তবে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কী বলবে, তা বাংলাদেশের বিষয়। তিনি বলেন, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কের একটি অংশ মাত্র। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার কিছু সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের কাছে বিক্রির জন্য কাজ করতে চায়।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, শ্রম অধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক না হওয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন অর্থায়ন সহযোগিতা (ডিএফসি) পাচ্ছে না। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ পরিকল্পনার সময় বিনিয়োগ পরিবেশ, শ্রম অধিকার পরিস্থিতি দেখে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ ওই পরিকল্পনায় নেই।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত