বাড়ছে পানি, অবনতির দিকে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতি
গৃহবধূ কাজল বেগমের ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি। খাটের উপরও পানি উঠে গেছে। তাই পরিবারের চার সদস্যদের নিয়ে উঠেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। কাজল বেগমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায়। তিনি আশ্রয় নিয়েছেন পৌর আইডিয়াল কলেজের ভবনে। তার মতো ১৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিদ্যালয়টিতে। এদের সকলের বাড়ি পৌরসভার ২ নম্বর এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। পৌর আইডিয়াল কলেজ ছাড়াও স্থানীয় একটি মহিলা মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক পরিবার। আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে জেসমিন, নয়ন ও রিনা বেগম বলেন, সব ডুবে গেছে। ঘরের মধ্যে হাঁটুর উপর পানি। থাকার মতো অবস্থা নাই। পরিবারের শিশু সন্তানদের নিয়ে ভয়ে ছিলাম। এছাড়া রান্নার চুলো ডুবে আছে। রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। তারা জানায়, আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ কেউ শুকনো খাবার দিয়ে গেছে। তবে চাল না থাকায় ভাত রান্নার ব্যবস্থা ছিল না৷ শুকনো খাবার খেয়েই কোনোমতে দিন পার করছি। এদিকে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেনি, তারা পানিবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। অনেকে তাদের ঘরবাড়ি রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী। লক্ষ্মীপুরে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তবে গত দুই দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হলেও পানির উচ্চতা বাড়তে থাকে। ফলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে স্থানীয় লোকজন। জেলার সদর উপজেলার পৌর এলাকা, মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, উত্তর জয়পুর, দত্তপাড়া, চরশাহী, কুশাখালী, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, বাঙ্গাখা, পর্বতীনগর, টুমচর ইউনিয়ন এবং জেলার কমলনগরের চরকাদিরা ও রামগতি চর বাদাম, চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন, রায়পুর এবং রামগঞ্জ উপজেলাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, এতদিন বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে বৃষ্টি নেই। কিন্তু পানি কমার বদলে বাড়তেছে। পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। এতে উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পৌর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সবুজ বলেন, ঘরের ভেতরে হাঁটু পানি। ঘরের সামনে কোমর পানি। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। আমাদের আশেপাশের প্রায় প্রত্যেকের ঘরে পানি উঠে গেছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। বৃষ্টি নেই, কিন্তু দিন দিন পানি বাড়ছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা শারমিন ও জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বসতঘরের সামনে হাঁটু পানি। ঘরে এখনো ঢুকেনি। তবে যেভাবে পানির উচ্চতা বাড়ছে, এতে যে কোন সময় ঘরে পানি ঢুকতে পারে। বাড়ির আশেপাশে সাপের উপদ্রব্য বেড়েছে। শিশু সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে আছি। তারা আরও জানায়, তাদের আশপাশের অনেক বসতঘরে পানি উঠে গেছে। তারা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকের রান্নার চুলো পানির নিচে তলিয়ে থাকায় খাবারের যোগান দিতে কষ্ট হচ্ছে। মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ চলাচলের পথও ডুবে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘর থেকেও বের হচ্ছে না৷ চন্দ্রগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও সাংবাদিক মোহাম্মদ হাসান বলেন, চন্দ্রগঞ্জ এবং উত্তর জয়পুরসহ আশপাশের গ্রামীণ জনপদ তলিয়ে গেছে। কারো ঘরে পানি উঠেছে। কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বিবার্তা/সুমন/এমজে
বাড়ছে পানি, অবনতির দিকে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত