যে কৌশলে ৭ চাঞ্চল্যকর তদন্তে সফল পিবিআই

| আপডেট :  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:৪০  | প্রকাশিত :  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:৪০

থানা পুলিশ সুপ্তি মল্লিক খুনের ঘটনায় এজাহার দিয়েছিল তার নিরপরাধ স্বামী ও ভাসুরের বিরুদ্ধে। এই মামলায় তাদের জেলও খাটিয়েছিল চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা পুলিশ। কিন্তু মামলার তদন্তের শেষ সমীকরণ মেলাতে পারেনি তারা। শেষমেশ মামলাটি যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে। এক টুকরো কাপড়ে লেগে থাকা এক ফোঁটা বীর্যকে ভিত্তি ধরেই পিবিআই এগিয়ে নেয় তদন্ত। এ বীর্যই মিলিয়ে দেয় মামলার সমীকরণ। বর্তমান স্বামী কিংবা শ্বশুর কেউ নন, আগের স্বামী জাকির হোসাইনই সুপ্তি মল্লিকের একমাত্র খুনি। গ্রেফতারের পর খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দেন জাকির। মামলার তদন্তে ইতি টেনে ঘটনার আদ্যোপান্ত উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্রও জমা দেয় পিবিআই।

শুধু সুপ্তি মল্লিক হত্যাকাণ্ডই নয়, ২০২১ সালে চট্টগ্রামের এমন চাঞ্চল্যকর সাতটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের মেট্রো ইউনিট। এক অজ্ঞাত ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছিল না কোনো ক্লু। মামলার দায়িত্ব নিয়ে মাত্র তিন দিনেই ক্লু উদঘাটন করে তাক লাগিয়ে দেয় পিবিআই টিম। আরেক মামলার আসামি পলাতক ছিল ২১ মাস, পিবিআই মামলার দায়িত্ব নিয়ে ধরেছে তাকে ২৬ দিনে। রহস্যে ঘেরা ক্লু-লেস একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে একটি কঙ্কালকেই বেছে নেয় পিবিআই। ওই কঙ্কালই শেষমেশ বলে দেয় খুনির পরিচয়।

অপর এক হত্যা মামলায় ১০ বছরেও থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ মিলে হত্যাকাণ্ডের কূল-কিনারা পায়নি। তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে এক বছরেরও কম সময়ে আসামি শনাক্ত করে পিবিআই মেট্রো ইউনিট। সংস্থাটির তৎপরতায় ১০ বছর পর আদালতে হাজির হয়ে খুনের দায় স্বীকার করে আসামি। আবার চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাগুলোর অন্যতম ছিল সুদীপ্ত হত্যা মামলা। দলবেঁধে ঘর থেকে ডেকে এনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। দীর্ঘদিন তদন্ত করেও এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে, তা বের করতে পারেনি চকবাজার থানা পুলিশ। পিবিআই অল্পদিনের তদন্তেই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

এছাড়া নিজের স্ত্রী মিতুকে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারই খুন করিয়েছে- এমন প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট। প্রায় ছয় বছর পর এ সংস্থার হাতে নতুন আঙ্গিকেই মোড় নিলো চট্টগ্রামের সবচেয়ে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড। পিবিআইয়ের হাতেই গ্রেফতার হয়ে স্ত্রী হত্যা মামলার বাদী বাবুল আক্তার এখন আছেন কারাগারে। ইতিহাসের অংশ হয়ে এ একটি ঘটনায় দায়ের হয় দুটি মামলা। যে দুটি মামলা এখনো তদন্ত করছে পিবিআই।

২০২০ সালের ৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার পানওয়ালা পাড়া এলাকায় খুন হন গৃহবধূ সুপ্তী মল্লিক। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয় নিহতের স্বামী বাসুদেব চৌধুরী ও তার বড় ভাই অর্থাৎ নিহতের ভাসুর অনুপম চৌধুরীকে। তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় ডবলমুরিং থানা পুলিশ। তবে মূল খুনি আটক না হওয়ায় মামলাটির জট যেন কিছুতেই খুলছিল না।

শেষমেশ জটিল এ মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। সংস্থাটির চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা শুরুতে মামলার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও-অডিও সংগ্রহ করেন। গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তির সহায়তায় শনাক্ত করেন সুপ্তি মল্লিকের আগের স্বামীকে। মো. জাকির হোসাইন (২৭) নামের ওই ব্যক্তিকে গত বছরের ১৩ জানুয়ারি ঢাকার আশুলিয়া নিশ্চিন্তপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় তার কাছ থেকে নিহতের এবং ঘটনার সময় জাকিরের ব্যবহার করা মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

আগে থেকে জব্দ করা নিহতের ভ্যাজাইনাল সোয়াব এবং এক টুকরো কাপড়ে বীর্যের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ওই বীর্যের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে আসামি মো. জাকির হোসাইনের ডিএনএ প্রোফাইলের মিল পাওয়া যায়। এতে পুরোপুরি শনাক্ত হয় সুপ্তি মল্লিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত একমাত্র জাকিরই। পরবর্তীতে তিনি আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সুপ্তির সঙ্গে তিনি পুনরায় প্রেম এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। একপর্যায়ে কথা-কাটাকাটির জেরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনিই একমাত্র জড়িত। এ ঘটনার সঙ্গে বর্তমান স্বামী ও ভাসুর কেউ জড়িত নয় মর্মে তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।

একপর্যায়ে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার নিজেই জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দায়ের করা হয় নতুন মামলা। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পিবিআই। যদিও এ ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলাই এখনও তদন্তাধীন রয়েছে

২০২০ সালের ২ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের চৌচালা এলাকায় জমি খুঁড়তে গিয়ে এক ব্যক্তির কঙ্কাল পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ কঙ্কালটি উদ্ধার করে। বিষয়টি জানাজানি হলে শামশুল নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, কঙ্কালটি তার ভাইয়ের। তার দাবির সত্যতা যাচাই করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শেষে কঙ্কালটি শামশুলের ভাই রুবেলের (২৭) বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর আদালতের নির্দেশে রুবেলের হত্যা মামলার দায়িত্ব নেয় পিবিআই।

তদন্তের শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রুবেলের ব্যবহৃত মোবাইলটি জাহেদ নামে এক ব্যক্তি ব্যবহার করছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সোহরাবের থেকে মোবাইলটি কিনেছেন বলে স্বীকার করেন। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, রুবেল নিখোঁজ হওয়ার পর সোহরাব হালিশহর এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

এরপর প্রায় এক বছরের চেষ্টা শেষে ২০২১ সালের ৫ মে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সোহরাবকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরদিন সোহরাব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে চট্টগ্রামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে সোহরাব উল্লেখ করেন, রুবেলের কাছ থেকে তিনি সুদে কিছু টাকা ধার নেন। পাঁচ মাস পর সেই টাকা ফেরত নিয়ে উভয়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়। একদিন জমিতে ঝগড়ার একপর্যায়ে রুবেলকে কোদাল দিয়ে আঘাত করে সোহরাব। এতে রুবেল ঘটনাস্থলে নিহত হন।

২০১২ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার রেলওয়ে স্টেশন কলোনি এলাকায় খুন হয় মো. রফিকুল ইসলাম। থানায় মামলা দায়েরের পর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত তদন্ত করে পুলিশ। তবে তাদের তদন্তে কোনো আসামি শনাক্ত না হওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। সেই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দায়িত্ব দেন আদালত।

২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় পাঁচ বছর আট মাস মামলাটি তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। দীর্ঘ তদন্তে কোনো আসামি শনাক্ত না হওয়ায় তারাও একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয়। আদালতে দাখিল করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন। তবে এবার বাদীর আপত্তিতে ডিবির চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করেননি আদালত। ফের মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মেজবাহউদ্দিন খান মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরুর এক বছরের আগেই তিনি শনাক্ত করেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামিকে। পিবিআইয়ের একাধিক অভিযানের পর শনাক্ত হওয়া আসামি রাশেল ওরফে রাশেদ (৩১) ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, জুয়া খেলায় মোবাইল ও টাকা হারানোর ফলে পূর্বশত্রুতার কারণে রফিককে হত্যা করা হয়।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীর একটি জমি থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই প্রযুক্তির সহায়তায় মরদেহটি সজীব নামে এক ব্যক্তির বলে শনাক্ত করে পিবিআই। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল থানা এলাকার বাসিন্দা আবদুল হক স্বপনের ছেলে। এ ঘটনার পর টানা তিনদিন অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পিবিআই। রহস্য উন্মোচন করেন হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কাহিনির।

মূলত হবিগঞ্জের নুরুল আমিনের (২৭) সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের। এর জেরে জান্নাত আরেক যুবক সজীবের (২৭) সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জেনে স্ত্রীকে তালাক দেন নুরুল আমিন। কিছুদিন পর জান্নাতকে আবার ফিরে পেতে মরিয়া হন নুরুল। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান সজীব। তাই পরিকল্পনা করে সজীবকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেন তিনি। ঘটনার পর টানা তিনদিন অভিযান চালিয়ে নুরুল আমিনকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

২০২০ সালে ১৭ জানুয়ারি কর্ণফুলী উপজেলা থেকে মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে দুবাই প্রবাসী রায়হানকে অপহরণ করেন আসামিরা। তার দীর্ঘদিনের পরিচিত সুমী নামের এক নারীর মাধ্যমে কৌশলে ফাঁদ পেতে তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ না পেয়ে এদিন শ্বাসরোধে হত্যা করে রায়হানের মরদেহ কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় ফেলে চলে যায় আসামিরা। এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আবদুর রহমান ওরফে লাল (২৪)। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দীর্ঘ প্রায় ২১ মাস ধরে পলাতক ছিলেন তিনি। এরইমধ্যে তাকে গ্রেফতার করতে না পেরে হাল ছেড়ে দেয় থানা পুলিশ। আবদুর রহমানকে পলাতক দেখিয়ে মোট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় থানা পুলিশ। কিন্তু আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন।

আদালতের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে তদন্ত শুরুর মাত্র ২৬ দিনের মাথায় দীর্ঘ প্রায় ২১ মাস ধরে পালিয়ে থাকা মামলার অন্যতম আসামি আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে কর্ণফুলী উপজেলার ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরির পাশে মৌলভীবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর তিনি চট্টগ্রামে এসে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন মামলাটি তদন্ত করে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার যায় পিবিআইতে। এরপর ঘুরতে থাকে মামলার তদন্তের মোড়। একপর্যায়ে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার নিজেই জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দায়ের করা হয় নতুন মামলা। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পিবিআই। যদিও এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলাই এখনো তদন্তাধীন।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানার নালাপাড়ার বাসায় হানা দিয়ে ঘুম থেকে তুলে টেনেহিঁচড়ে বাইরে এনে হত্যা করা হয় সুদীপ্তকে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা এক বছরের বেশি ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করে থানা পুলিশ। এ সময়ে তারা ১১ জনকে গ্রেফতার এবং দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেন। তবে এতেও হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলার তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের হাতে।

এরপর সংস্থাটির হাতে হন গ্রেফতার মিজানুর রহমান এবং মোজাম্মেল হক নামের দুই আসামি। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে জানা যায়, সুদীপ্ত হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন লালখানবাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম। যিনি ঘটনার আগের দিন আরেক আসামি আইনুল কাদের নিপুকে দুই ঘণ্টার ভেতর কাজ শেষ করে, পুরো ঘটনা ভিডিও করে আনার নির্দেশ দেন। এরপর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা মাসুমসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

জটিল এসব মামলার তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর সুপার নাইমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘তদন্ত হাতে এলেই আমরা মামলা সংক্রান্ত নথি স্টাডি করি। ঘটনাস্থলসহ পারিপার্শ্বিক অবস্থার খুঁটিনাটি বোঝার চেষ্টা করি। আমাদের প্রশিক্ষিত একঝাঁক কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি মেধা ও যোগ্যতার সমন্বয়ে প্রতিটি মামলা তদন্ত করেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আমাদের এগিয়ে দেয় তা হলো প্রযুক্তি এবং আমাদের অভিভাবক অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার স্যারের নির্দেশনা। অপরাধ ও অপরাধীদের বিষয়ে স্যারের অভিজ্ঞতাগুলো আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি বলেই পিবিআই আজকে দেশের সেরা একটি তদন্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি মামলায় আসামি অনেকেই হয়ে থাকে। কিন্তু ওই ব্যক্তির ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত না হলে তাকে আমরা গ্রেফতার করি না। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আমাদের এ পার্থক্যটি রয়েছে। কারণ একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে কারাগারে রাখার মতো চিন্তা পিবিআই কখনোই করে না।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘পিবিআই বেশকিছু জটিল মামলার জট খুলে সুনাম কুড়িয়েছে। তাদের এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি তদন্তের ক্ষেত্রে চাইলে তারা রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে। এক্ষেত্রে তদন্ত আরও নির্ভুল হবে। যেহেতু বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থার আদলে গড়া হয়েছে, সেহেতু পিবিআই কর্মকর্তাদের আরও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে দেশের জটিল অপরাধ বিশ্লেষণ করে, সে আলোকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত