রাজধানীর অনেক ব্যাংকের ফটক বন্ধ, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

| আপডেট :  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০৮:০২  | প্রকাশিত :  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০৮:০২


রাজধানীর অনেক ব্যাংকের ফটক বন্ধ, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

বিবার্তা প্রতিবেদক


বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, বাসাবো ও শাহজাহানপুরে বেশ কিছু ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ব্যাংকগুলোর প্রধান গেট লাগিয়ে রাখেন নিরাপত্তা কর্মীরা। ফলে সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি সাধারণ গ্রাহকরা।

৪ আগস্ট, রবিবার সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু ব্যাংক না, বেশিরভাগ এটিএম বুথও বন্ধ আছে। এতে করে যারা টাকা তুলতে বা জমা দিতে আসেন তারাও বিপাকে পড়ছেন।

আফতাবনগরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের উপশাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সকালে ব্যাংক খুললেও আন্দোলন ও বিক্ষোভের মধ্যে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।

মেরুল বাড্ডার এটিএম বুথের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, একের পর এক আন্দোলনকারীদের মিছিল যাচ্ছে। যেকোনো সময় সংঘাত বেধে গেলে অবস্থা বেগতিক হবে। এজন্য বুথের শাটার নামিয়ে রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে।

বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য বের হয়েছি। আশপাশের সব এটিএম বুথ এমনকি ব্যাংক পর্যন্ত বন্ধ পাচ্ছি। এদিকে যা অবস্থা তাতে করে সামনে দিকে যেতেও ভয় পাচ্ছি।
 
বাসাবো এলাকার এক বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক জানান, বাসাবো এবং শাহজাহানপুর ও খিলগাঁওয়ের বেশ কিছু জায়গায় ঘুরেছি, কোথাও ব্যাংক খোলা পায়নি আবার বুথও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে আন্দোলনকারীরা জানান, অসহযোগ আন্দোলন চলছে। সব অফিস আদালত স্বাভাবিক চললে আন্দোলনের মূল প্রভাব নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ব্যাংক বন্ধ না, লেনদেন সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই হয়তো তারা বন্ধ রেখেছেন।

এছাড়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ব্যাংকপাড়া নামে পরিচিত মতিঝিলে এলাকায় মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। লেনদেনের পাশাপাশি ব্যাংকের শাখাগুলোতে কমেছে গ্রাহকের উপস্থিতিও। নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু কিছু ব্যাংকের শাখা বন্ধ রাখতেও দেখা গেছে।

রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল ও গুলিস্তান এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পাশেই অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিস। কিন্তু আজ ব্যাংকের প্রধান দরজা বন্ধ রাখতে দেখা যায়।

সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু অপর পাশে একটি ছোট দরজা আছে সেদিক দিয়ে গ্রাহক আসা-যাওয়া করতে পারছেন। আন্দোলনের কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যার উপস্থিতি অনেক কম। এ কারণে লেনদেনের পরিমাণও কমে গেছে শাখায়। তাছাড়া শাখার নিরাপত্তার জন্য আমাদের নিয়োগকৃত নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী রয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পার্শ্ববর্তী থানাতেও অবহিত করে রেখেছি।

এদিকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময়ে শাখা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। একই কারণে বন্ধ সে বিষয়ে জানাতে পারেননি দায়িত্বরত কর্মচারীরা। মাহিদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী শাখাটিতে এসে অনেকক্ষণ থেকে ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সম্পন্ন করতে পারেননি।

তিনি জানান, কোন নোটিশ ছাড়াই এভাবে শাখা বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নি। অন্যান্য ব্যাংকের মতো একটি বিকল্প দরজা রাখলেও পারত। কিন্তু এই শাখাটি পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার দরজার আংশিক, দিলকুশার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংকের প্রধান দরজা বন্ধ দেখা গেছে আজ।

বক চত্বরে অবস্থিত সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের কাউন্টারগুলো ছিল লোকশুন্য। মাঝেমধ্যে দুই একজন গ্রাহক আসছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে খুব দ্রুত চলে যাচ্ছেন।

রবিউল পাটোয়ারী নামের একজন গ্রাহক জানান, জরুরি প্রয়োজনে কিছু টাকা দরকার সেজন্য উঠাতে এসেছি। তা না হলে এই পরিস্থিতির মধ্যে ব্যাংকে আসতাম না। এসে দেখি ভালোই হয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো লাইন ধরতে হয়নি। সরাসরি কাউন্টার থেকে টাকা তুলতে পেরেছি।

ব্যাংক এশিয়ার মতিঝিল শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, মাঝে মাঝে আশপাশে মিছিলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে কখনো শাটার বন্ধ রাখছি আবার কখনো খুলছি। আমার কাছে শাখার নিরাপত্তা সবার আগে। গ্রাহকরা যাতে নির্বিঘ্নে লেনদেন করতে পারে সেই ব্যবস্থাও রেখেছি আমরা। বিকল্প গেটও আছে প্রধান গেটও খুলে দিচ্ছি মাঝে মাঝে।

মতিঝিল এলাকা ঘুরে আরো দেখা যায়, চলাচলের প্রধান বাহন এখন রিকশা, সিএনজি এবং প্রাইভেটকার। এদিকে দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ডে কোনো বাস দেখা যায়নি।

ফকিরাপুলের জনতা ব্যাংকের লেনদেনের চিত্রেও ফুটে উঠেছে আন্দোলনের প্রভাব। গ্রাহক উপস্থিতি একেবারেই কম। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, লেনদেন স্বাভাবিক।

তারা জানান, এই শাখাতে মূলত বিমানের টিকিট কেনাবেচা করা গ্রাহকরা টাকা জমা দিয়ে থাকেন। এখন বারোটা বাজছে। দুইটার পর থেকে চাপ তৈরি হবে লেনদেনের। প্রতিদিনই এই সময় অল্প গ্রাহক দেখা যায়। ছাত্র আন্দোলনকে লেনদেনের জন্য কোনো সমস্যা মনে করছে না তিনি। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী থানাতে অবহিত করে রাখা হয়েছে।

নটরডেম কলেজ এর বিপরীত পাশে অবস্থিত এটিএমগুলোতে কোনো গ্ৰাহক দেখা যায়নি। নির্বিঘ্নে লেনদেন করা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু-একজন করে এসে টাকা ওঠাচ্ছেন। তবে অন্যান্য দিনের মতো চাপ নেই বলে জানা গেছে। আজ নেটওয়ার্কেও কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কর্মীরা।

দিলকুশা এলাকার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া শাখা ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস। সেখানেও ফুটে উঠেছে অসহযোগ আন্দোলনের ছাপ। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করার কারণে পুরো এলাকা প্রায় ফাঁকা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিসে লেনদেন করতে আসতে কাউকে দেখা যায়নি।

ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ একেবারেই কম। স্বাভাবিক দিনে যেখানে সাপের মতো লাইন হয়ে থাকে, আজকে প্রতিটি কাউন্টারে একজন-দুজনের উপস্থিতি।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত