লামায় কাজুবাদাম ও কপি প্রকল্পে চারা সরবরাহ নিয়ে বিপাকে নার্সারি মালিক, ৩ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

| আপডেট :  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯  | প্রকাশিত :  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯


লামায় কাজুবাদাম ও কপি প্রকল্পে চারা সরবরাহ নিয়ে বিপাকে নার্সারি মালিক, ৩ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

লামা প্রতিনিধি


বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি কুমারী চাককাটা এলাকায় এক ব্যক্তি ৩ লক্ষ কাজুবাদাম ও কপি চারা উৎপাদন করেছেন। কৃষি বিভাগের ‘কাজু বাদাম ও কপি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে সরবরাহের লক্ষ্যে এ চারা উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে চারা সরবরাহ করতে না পেরে মহা বিপাকে পড়েছেন তিনি। চলতি মৌসুমে প্রকল্পের প্রদর্শনীতে চারাগুলো সরবরাহ করা না গেলে ক্ষতি হবে তিন কোটি টাকা। উৎপাদিত চারা সংগ্রহের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়ি ঢাকাস্থ প্রকল্প পরিচালক বরাবরে আবেদনও করেছেন নার্সারি মালিক নুর মোহাম্মদ।

জানা যায়, সরকার দেশের জনগণের কর্মসংস্থান ও পুষ্টি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বাৎসরিক ১৫ হাজার টন কাজু বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ‘কাজু বাদাম ও কপি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।

২০২১ সাল থেকে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের বীজ আমদানির মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে উল্লিখিত প্রকল্পে সরবরাহ করে আসছে মেসার্স এন.আর মেরিন এন্ড সার্ভিসেস ও এন.আর অগ্রো রিসোর্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অন্য বছরের মত চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্যও এ প্রতিষ্ঠানটি দেড় লক্ষ কাজু বাদাম ও দেড় লক্ষ কপি চারা উৎপাদন করে। চারাগুলো এখনিই জমিতে কিংবা পাহাড়ে লাগানোর উপযুক্ত সময়। চলতি মৌসুমের মধ্যে চারাগুলো প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মাঝে সরবরাহ করতে না পারলে বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে না পারলে দেশের কৃষি উন্নয়ন ব্যাঘাতের পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।

উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের চাষি তৈদুরাম ত্রিপুরা বলেন, হর্টিকালচারের সহযোগিতায় ১০ একর পাহাড়ি জমিতে কপি চাষ করেছি। গত কয়েক বছর ধরে এখানের উৎপাদিত কপি প্রক্রিয়াজাত শেষে এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত হচ্ছে।

এ সফলতা দেখে ইতোমধ্যে উপজেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে আরও শত শত কৃষক কপি ও কাজু বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুকুমার দেওয়ানজী।

সরেজমিন উপজেলার কুমারী নীচ পাড়া-ফাঁসিয়াখালী সড়কের চাক কাটাস্থ নুর মোহাম্মদের নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশেই প্রায় ৫ একর জমি জুড়ে রয়েছে কাজু বাদাম ও কপি চারা। চারাগুলোর বয়স প্রায় এক বছর। এতে ৩ লক্ষ চারা রয়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০জন শ্রমিক নার্সারির চারাগুলো পরিচর্যা করছেন বলে জানান কর্মরত শ্রমিক আবুল কাশেম।

চারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নুর মোহাম্মদ বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনীর জন্য কপি ও কাজু বাদাম চারা সরবরাহ করে আসছি। এ ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমেও চাহিদা মোতাবেক তিন লক্ষ চারা উৎপাদন করেছি। উৎপাদিত চারাগুলোর বয়স প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। কিন্তু চারাগুলো এখনো প্রকল্পে সরবরাহ করতে পারিনি। চলতি বর্ষা মৌসুমে চারাগুলো প্রকল্পে সরবরাহের মাধ্যমে পাহাড়-জমিতে রোপণ করা না হলে অকেজো হয়ে পড়বে। এতে আমি প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবো। আর দেনার দায়ে আমাকে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালাতে হবে। কারণ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে চারাগুলো উৎপাদন করেছি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়ি ঢাকার ‘কাজু বাদাম ও কপি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহীদুল ইসলাম জানায়, কাজুবাদাম ও কপি চারা ক্রয়ের চাহিদা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পাশাপাশি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পট পরিবর্তনের কারণে বরাদ্দ অনুমোদনে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আশা করি চলতি মাসের মধ্যে চারা ক্রয়ের বরাদ্দ অনুমোদন পাওয়া যাবে। বরাদ্দ সাপেক্ষে চারাগুলো সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

বিবার্তা/আরমান/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত