লামায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে নীচু এলাকা প্লাবিত, গৃহবন্দি ১২ হাজার মানুষ

| আপডেট :  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৫৭  | প্রকাশিত :  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৫৭


লামায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে নীচু এলাকা প্লাবিত, গৃহবন্দি ১২ হাজার মানুষ

লামা প্রতিনিধি


গত দুই দিনের ভারি বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নীচু এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এতে ওইসব এলাকার ঘরবাড়ি, দোকান পাঠ, সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়।

মাতামুহুরী নদী, লামা খাল, বমু খাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়ি খাল, ও পোপা খাল সহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীর প্রায় ১২ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে ওইসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষগুলো।

১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের দোকান ও ঘরবাড়ির মালামালসহ গৃহপালিত পশু নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বন্যা আক্রান্তরা।

এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে মাইকিং শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলো।

পাশাপাশি দুর্যোগ কবলিতরা আশ্রয় নিতে বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলামসহ যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা পৌরসভা এলাকার প্লাবিত এলাকাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে আক্রান্তদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদা দেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার থেকে থেকে মুষলধারে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর এ টানা বর্ষণের ফলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, লাইনঝিরি, বড় নুনারবিলপাড়া, পুরাতন থানা এলাকা, রুপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লাপাড়া, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নীচু এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পৌর এলাকার হলিচাইল পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাইসমিল, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানের কয়েকশ ঘরবাড়ি ও দোকান পাঠ রয়েছে।

আবার অতি বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস দেখা দিয়েছে। এতে ওইসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রামীণ সড়কগুলো কোথাও ভাঙন দেখা দিয়েছে আবার কোথাও ধসে পড়েছে বলেও জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

অন্যদিকে লামা-আলীকদম সড়কের কেয়ারার ঝিরি, রেপারপাড়া আবাসিক ও লাইনঝিরি এলাকা পানিতে ডুবে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

খাল ও ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে লামা পৌরসভা, লামা সদর, গজালিয়া, ফাইতং, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের ঘরবাড়ি প্লাবিতসহ প্রায় ১২ হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

তারা জানান, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছে।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন চৌধুরী জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইয়াংছা বাজারের সহ বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের ইয়াংছা ব্রিজের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান নুরুল হোছাইন চৌধুরী।

উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, কুতুব উদ্দিন সাগর সহ আরো অনেকে বলেন, প্রতিবারের মত এবারও টানা বৃষ্টির কারণে প্রথম বারের মত প্লাবিত হচ্ছে লামা বাজারের একাংশসহ আশপাশের নীচু এলাকা সমূহ। বাজার ব্যবসায়ীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দোকানের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম জানায়, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করার পাশাপাশি প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের উপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদা দেওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক
পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিস ও মসজিদগুলোর মাধ্যমে মাইকিং করে সচেতন করা হয়েছে। একইভাবে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষকেও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিবার্তা/আরমান/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত