শিক্ষক নিয়োগে নতুন পদ্ধতি

| আপডেট :  ১৫ মার্চ ২০২২, ০৫:১১  | প্রকাশিত :  ১৫ মার্চ ২০২২, ০৫:১১

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়ার পর শূন্যপদের ভুল তথ্য নিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রার্থীদের। প্রচলিত নিয়মে, নিয়োগের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করে এনটিআরসিএ। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে সংগৃহিত তথ্য নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের পর শুধু ভুল তথ্যের কারণে অনেক সুপারিশপ্রাপ্ত যোগদান করতে পারেন না।

অনেকে যোগদান করলেও এমপিওভুক্ত হতে পারেন না। গত দ্বিতীয় চক্রে শিক্ষক নিয়োগে কয়েকহাজার প্রার্থী এ জটিলতায় পড়েছিলেন। পরে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের দিয়ে যাচাই করিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও তৃতীয় চক্রেও বেশ কয়েকজন প্রার্থী শূন্যপদের ভুল তথ্যের ভুক্তভোগী হচ্ছেন। এসব জটিলতা এড়াতে নতুন পদ্ধতিতে তিন অধিদপ্তরের কাছ থেকে শূন্যপদের তথ্য নিতে চায় এনটিআরসিএ।

এদিকে অধিদপ্তরগুলো বলছে, শূন্যপদের তথ্য চাওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানায়নি এনটিআরসিএ। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠালে কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। নতুন এ পদ্ধতিতে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করা হলে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবারও প্যাটার্নের অতিরিক্ত ভুল পদে ও নারী কোটার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন প্রার্থীরা। চূড়ান্ত সুপারিশপত্র নিয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে গিয়ে তারা বিষয়টি জানতে পারছেন। এমন পরিস্থিতি এমপিওভুক্তির অন্তরায় হয়ে উঠছে। তাই, প্রার্থীরা চাচ্ছেন, তাদের নিজ জেলার স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় নতুন করে সুপারিশ করা হোক। এর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় নিয়োগচক্রেও সারাদেশে দুই হাজার পাঁচশ’র বেশি প্রার্থী মহিলা কোটা ও প্যাটার্ন অতিরিক্ত পদে সুপারিশ পেয়ে ১৫ মাসের বেশি সময় এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। বেতন-ভাতাবঞ্চিত ছিলেন।

এদিকে এনটিআরসিএর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে তৃতীয় চক্রের শিক্ষক নিয়োগে প্যাটার্ন জটিলতা ও নারী কোটার ভোগান্তিতে থাকা বেশ কয়েকজন প্রার্থীর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের জটিলতা নিরসনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জারি হওয়া এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় হতে অনুমোদিত ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত একক শ্রেণি শাখার শিক্ষক বা প্যাটার্নভুক্ত শূন্যপদে শিক্ষক বা প্রদর্শক নিয়োগের জন্য চাহিদা উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠাবেন। উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তার সঠিকতা যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠাবেন। জেলা শিক্ষা অফিসার তার জেলার সব চাহিদা যাচাই করে একীভূত করে এনটিআরসিএতে পাঠাবেন। ভুল চাহিদা পড়লে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান ও উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসার দায়ী থাকবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে ভুল তথ্য পাঠানোর কারণেই মূলত এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজে তথ্য না দিয়ে কম্পিউটারের দোকান বা কোনো কর্মচারীর মাধ্যমে পাঠান। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান প্রধানেরই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কম থাকায় তারা জটিলতা সৃষ্টি করেন। শাস্তি বাবদ এমপিও কেটে নেয়ার পরেও একটি জটিলতা রয়ে যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা তথ্য যাচাই করে পাঠালেও ভুল থেকে যায়। তাই আমরা চাচ্ছি সরাসরি অধিদপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে। তাতে ভুল তথ্য আসার সম্ভাবনা কম থাকবে।

এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়োগ চক্রে সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মাধ্যমে শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। তৃতীয় নিয়োগ চক্রে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে শূন্যপদের চাহিদা সংগ্রহ করা হয়। তিনটি নিয়োগ চক্রেরই রিকুইজশন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো চাহিদাপত্রে অনেক ত্রুটি ছিলো। নির্ভুল নিয়োগ নিশ্চিতে তিনটি অধিদপ্তরের মাধ্যমে শূন্যপদের চাহিদা সংগ্রহ করে সুপারিশ করা যেতে পারে। তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শূন্যপদের চাহিদা গ্রহণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেটি পরিবর্তন করতে হলে মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র পরিবর্তন করতে হবে। এ বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

এদিকে অধিদপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, শূন্যপদের তথ্য পাঠানোর দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হলে তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমিন বলেন, এনটিআরসিএ শূন্যপদের তথ্য চাওয়ার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আমরা পাইনি। তারা প্রস্তাবনা দিলে আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এনামুল হক হাওলাদার বলেন, ডিজি স্যারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত