কমানো হচ্ছে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা

| আপডেট :  ৩০ জুন ২০২২, ০৮:২১  | প্রকাশিত :  ৩০ জুন ২০২২, ০৮:২১

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য । আর এ লক্ষ্য সামনে রেখেই আজ বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে যেমন থাকছে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ, পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নতুন করে করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রভাব। সাথে আরো থাকবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তার চাপ। বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির তার মেয়াদের শেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন বছরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। কারণ, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার যতগুলো উপকরণ রয়েছে তার প্রায় সবগুলোই সক্রিয়। প্রথমত, আমাদের মতো আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে সবসময়ই টাকার মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সঙ্কটের সময় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে থাকে। বিগত সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতি কার্যকর হতো, কারণ তখন ডলারের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য ছিল। কিন্তু চলতি বছর থেকে ডলারের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে কোনো ভারসাম্য নেই। একদিকে রেমিট্যান্স কমে গেছে, সেই সাথে কাক্সিক্ষতহারে বাড়ছে না রফতানি আয়।

বিপরীতে আমদানি ব্যয় হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমদানিতে ব্যয় যতটা না বাড়ছে পরিমাণের দিক থেকে তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে মূল্যের দিক থেকে। করোনার কারণে গত দ্ইু বছর ধরে এলসির মূল্য পরিশোধ বকেয়া রাখা হয়। জানুয়ারি থেকে মূল্য পরিশোধ শুরু হয়। সব মিলেই ডলারের ওপর চাপ বেড়ে যায়। এ চাপ সামাল দিতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি ডলার সরবরাহ করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে আমদানি বিল পরিশোধে প্রতি ডলার ৯৮-৯৯ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

আর খোলা বাজারে তো আগেই প্রতি ডলার ১০৩ টাকা উঠে গিয়েছিল। তাই ডলারের এ সঙ্কট সহসাই কাটবে না। ডলারের সঙ্কট না কাটলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম আপনাআপনিই বেড়ে যাবে। এতে স্থানীয় পণ্য তৈরিতেও চাপ বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

আবার ইতোমধ্যে গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। আগামী মাসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার এ দুটোও অন্যতম উপাদান বলে মনে করা হয়। কারণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পণ্য উৎপাদন, পরিবহন থেকে শুরু করে অর্থনীতির সবগুলো শাখার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন মুদ্রানীতিতে এটাও অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতির এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু উপকরণ ব্যবহার ছাড়া তেমন কোনো করণীয় নেই। যে কয়েকটি উপকরণ রয়েছে, তার অন্যতম প্রধান হলো টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতে কম হারে ঋণ দেয়া। এজন্য আগামী অর্থবছরের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছে, তাতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত মে মাস পর্যন্ত সাড়ে ১২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সাড়ে ১৪ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনা হতে পারে। তবে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমবে না, বরং বেড়ে যাবে। একই সাথে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহে নিরুৎসাহিত করার তাগিদ থাকবে নতুন মুদ্রানীতিতে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত