বিরামপুরে প্রসূতির পেটে গজ ও ফুল রেখে সেলাই করার অভিযোগ

| আপডেট :  ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬  | প্রকাশিত :  ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬


বিরামপুরে প্রসূতির পেটে গজ ও ফুল রেখে সেলাই করার অভিযোগ

সারাদেশ

হিলি প্রতিনিধি


দিনাজপুরের বিরামপুর রাইহান ক্লিনিকে মাইমুন্না আক্তার মীম (১৮) নামের এক প্রসূতির সিজারের সময় পেটের মধ্যে গজ ও ফুল রেখে সেলাই দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলীর বিরুদ্ধে। প্রসূতির বাবা বাদী হয়ে জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ৩ সদস্যে একটি তদন্তের টিম গঠন করা হয়।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসার ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ তিনজনকে তদন্তের দায়িত্ব দেন জেলা সিভিল সার্জন।

প্রসূতি মাইমুন্না আক্তার মীম নবাবগঞ্জ উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের ইসাহাক আলীর স্ত্রী।

এদিন রাইয়ান ক্লিনিকে সরজমিনে এসব তথ্য জানা যায়। এসময় প্রসূতির বাবা মতিয়ার রহমান বলেন, আমার মেয়ের প্রসব ব্যাথা উঠলে, গত ৬ মার্চ বিরামপুর রাইয়ান ক্লিনিকে ভর্তি করি। পরে ঐদিন ডা. তাহেরা খাতুন আমার মেয়ের সিজার করেন। তিনদিন পর মেয়েকে রিলিজ দেয় এবং বাড়ি নিয়ে যায়। ৭ দিন পর সেলাই কাটা হয়। তার ২৭ দিন পর মেয়ের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। আবার চলতি মাসের ৩ তারিখে রায়হান ক্লিনিকে ভর্তি করি। ভর্তি করেও কোন মতে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। শেষে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায় ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার মেয়ের অপারেশন করান। তখন ডাক্তাররা বলেন, মেয়ের পেটের মধ্যে গজ ও অনেক ময়লা ছিল। এছাড়াও আপনার মেয়ের জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছিল, তা কেটে ফেলা হয়েছে ফলে সে আর মা হতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে আর কোনদিন মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারবে না, তার  জীবন শেষ। আমি আমার মেয়ের এই ক্ষতির ন্যায্য বিচার চাই। সিভিল সার্জনের নিকট অভিযোগ করেছি। আমি চাই আর কোন মেয়ের যেন এমন সর্বনাশ না হয়।

প্রসূতি মাইমুন্না আক্তার মীম বলেন, গত ৬ মার্চ আমার প্রসব ব্যাথা উঠে। ডা. তাহেরা ম্যাডাম আমার সিজার করেন। পরে আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। দিনাজপুরে আবার আমার অপারেশন করে। অপারেশন করে আমার পেট থেকে গজ আর অনেক ময়লা বের করা হয়। ডাক্তাররা বলেন আমি আর কোন দিন মা হতে পারবো না।

বিরামপুর রাইয়ান ক্লিনিকের ম্যানেজার মাহবুব আলম বলেন, গত ৬ মার্চ আমাদের ক্লিনিকে মাইমুন্না আক্তার মীম নামের একজন প্রসূতি ভর্তি হয়। ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলী ম্যাডাম তার সিজার করেন। কিছুদিন পর ঐ রোগীর রক্তক্ষরণ হয় এবং আমাদের এখানে ভর্তি করান। সেদিন তাহেরা ম্যাডাম ছিলেন না, দিনাজপুর ছিলেন। শেষে আমাদের ক্লিনিকের এম্বুলেন্স করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম রসূল রাখি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলীর বিরুদ্ধে একজন প্রসূতির সিজার নিয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে। আমি ও দুইজন মেডিকেল অফিসারসহ তিন সদস্যের একটি তদন্তের টিম গঠন করে দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঐ প্রসূতীর পরিবারের লোকজনকে ডাকা হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। তার পেটে কোন গজ বা ফুল রাখা হয়নি। এটা আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে। তবে যদি দিনাজপুর মেডিকেল রিপোর্টে আমার ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আমি আপরাধ মেনে নিবো।

বিবার্তা/রব্বানী/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত