সরকারি কর্মচারি ও তাঁদের পরিবারের পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রে সুখবর

| আপডেট :  ১২ জুন ২০২২, ১০:৩১  | প্রকাশিত :  ১২ জুন ২০২২, ১০:৩১

বাজেটে সরকারের খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল ও আটা বিক্রি বাবদ বরাদ্দ কমানো হয়েছে। কর্মসৃজন কার্যক্রমেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অপরদিকে এ খাতের মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও তাঁদের পরিবারের পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদে দেওয়া সামাজিক নিরাপত্তার প্রিমিয়াম বাবদ রাখা হয়েছে। কৃষি খাতের ভর্তুকির বরাদ্দও রাখা হয়েছে এ খাতে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তায় প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ কমেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১৫টি কর্মসূচিতে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে এক লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে; যা জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে ৭ লাখ ৫৩ হাজার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও তাদের পরিবারের পেনশন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম হিসেবে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। এ থেকে প্রায় ২২ লাখ সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক উপকৃত হবেন। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে এখানে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে যা বাড়িয়ে ৭ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামীতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো লাগতে পারে। কারণ চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। গত কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম হিসেবে বাড়তি একটা অংশ যোগ করে মোট সুদহার নির্ধারণ করে সরকার। সামাজিক প্রিমিয়ামের মুনাফার অংশ সামাজিক নিরাপত্তার বরাদ্দের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বাজেটের প্রাক্কলনের চেয়ে এ খাতে ব্যয় বেশি হচ্ছে।

এদিকে খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ১৫ হাজার ৭৬৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ খাতে ৩৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে।

এ বিষয়ে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ম্ফীতি ও তার প্রভাব সম্পর্কে যেভাবে বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি কৃষি খাতের ভর্তুকিও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কৃষি ভর্তুকির সুবিধা ধনী, দরিদ্র সব শ্রেণির কৃষকই পান। অন্যদিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএসসহ সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তায় বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় ৬ শতাংশ কমানো হয়েছে। এখনকার সময়ে এটি খুবই বিপরীতমুখী অবস্থান। এ সময়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল। কারণ উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির কারণে বিশাল জনগোষ্ঠী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও তাদের পরিবারের পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের সুদে দেওয়া সামাজিক নিরাপত্তার প্রিমিয়াম বাবদ বরাদ্দ নিয়ে দীর্ঘদিন সমালোচনা করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, সরকারি কর্মী ও সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের যে সুবিধা দেওয়া হয়, তা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় রাখা উচিত নয়। কারণ এ দুটি খাতের সুবিধাভোগীদের অধিকাংশই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও সচ্ছল ব্যক্তি। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা হচ্ছে রাষ্ট্রের এমন কর্মকাণ্ড বা ব্যয় যাতে সমাজের দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এই দুই খাতের মাধ্যমে সে উদ্দেশ্য কতটা পূরণ হয় তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন সামাজিক সুরক্ষার আওতাভুক্ত করার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আছে। অনেকে বলছেন এটা সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে পড়ে না। কারণ সরকারি চাকরেদের অবস্থা অন্যদের তুলনায় ভালো। আবার বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত মানুষদের জীবনযাপনের জন্য বিকল্প কিছু নেই। অন্যদিকে গ্রামের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বয়স্কভাতা থাকলেও, শহরের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সরকারের বিশেষ কোনো কর্মসূচি নেই। এ জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদহারে সামাজিক নিরাপত্তা বাবদ একটা প্রিমিয়াম যোগ করা হয়েছে। সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত