চাঁদা না দেওয়ায় বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীসহ তার পরিবারকে গুলি
পাবনার ঈশ্বরদীতে চাঁদার টাকা না পেয়ে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম মনিকসহ তার মা পদকপ্রাপ্ত কৃষানি নুরুন্নাহার বেগম ও তার অপর দুই ভাইকে গুলি করে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- নুরুন্নাহার বেগম, তার ছেলে রায়হান কবির হিরোক, সিরাজুল ইসলাম মনিক এবং মিশুক বিশ্বাস। উল্লেখ্য, নুরুন্নাহার বেগম একজন রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত এআইপি কৃষক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার আলতাফ শাহ মাজারের ওরশ উপলক্ষে স্থানীয় বাবু মালিথার ছেলে রাব্বি মালিথার নেতৃত্বে একদল যুবক নুরুন্নাহার বেগমের বাড়িতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। নুরুন্নাহার বেগম তাদের ৩ হাজার টাকা দিলে রাব্বি মালিথা আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন এবং তা না দিলে হত্যার হুমকি দেন।
গত মঙ্গলবার রাতে নুরুন্নাহার বেগমের বড় ছেলে রায়হান কবির হিরোক কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাস্টারের মোড়ে রাব্বি মালিথা ও তার সহযোগীরা তাকে আটকে মারধর করে। এসময় তার মোবাইল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। হিরোককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে নুরুন্নাহার বেগম ও তার দুই ছেলে ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, এতে তারা সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা রাব্বি মালিথার কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাব্বি মালিথাকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রাব্বি মালিথার পক্ষে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা ছাত্রদল নেতা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন আগে স্থানীয় রিপন নামের এক ব্যক্তির লিচুর ব্যবসা নিয়ে কৃষানি নুরুন্নাহারের স্বামী রবিউল ইসলাম রবি বিশ্বাসের ছোট ভাই উজ্জলের সঙ্গে সালিশী বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে রিপনের টাকা ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব নেন নুরুন্নাহার বেগম। সোমবার সেই পাওনা টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য নুরুন্নাহারের বড় ছেলে হিরোকের সঙ্গে দেখা করে পাওনা টাকা চাওয়া হয়। সেসময় হিরোক উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে এবং মোবাইল ফোনে তার মা নুরুন্নাহার বেগমকে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিষানি নুরুন্নাহার বেগম তার অপর তিন ছেলেসহ ২৫-৩০ জন আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে মাস্টার মোড়ে অবস্থিত বিএনপির দলীয় অফিস ভাঙচুর করে।
ছলিমপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবু বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ওরশের টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধের বিষয়ে শুনেছি। পুরো ঘটনা সম্পর্কে জানতে উভয় পক্ষের বক্তব্য প্রয়োজন। তবে লিচু ব্যবসার টাকা নিয়ে সালিশের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
নুরুন্নাহার বেগম কালবেলাকে জানান, ছেলেকে আটকে মারধরের খবর পেয়ে মনিক ও মিশুকসহ ঘটনাস্থলে গেলে মালিথা ও তার সহযোগীরা আমাদের ওপর গুলি চালায়। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম মনিক কালবেলাকে জানান, বারবার অভিযোগ নিয়ে গেলেও আমরা থানা থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগ করি। এখন কোর্টে এসেছি মামলা করতে। আমি উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।
ঈশ্বরদী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত