আলুবীজের দাবিতে কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ
বগুড়ার শেরপুরে দ্বিগুণ দাম দিয়েও আলুবীজ না পেয়ে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকরা। এ সময় বীজ সিন্ডিকেটে জড়িত একটি কোম্পানির পরিবেশকদের (ডিলার) আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে ন্যায্যমূল্যে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সরাসরি বীজ আলু বিক্রির দাবিও জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে উপজেলা পরিষদের সামনে ঘণ্টাব্যাপী ওই কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
একপর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কৃষকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া উচরং গ্রামের আলু চাষি সাফিউল ইসলাম সাফি অভিযোগ করে বলেন, আমি এবার ১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করব। এ জন্য ব্র্যাকের ডিলার ফিরোজ আলী মাস্টারকে বীজের জন্য অগ্রিম টাকাও দিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাকে বীজ না দিয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা নিয়ে পাশের উপজেলায় বিক্রি করে দেন। তাই দুই-তিন দিন ধরে তার দোকানে ধরনা দিয়েও কোনো বীজ পাইনি। এখন তার দোকান তালাবদ্ধ। মোবাইল ফোনও বন্ধ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শেরপুর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর। এসব জমির জন্য আলুবীজ প্রয়োজন ৪ হাজার ৫০ টন। উপজেলায় ৯ জন ডিলার আছে। তাদের মাধ্যমে ৭৬ থেকে ৭৯ টাকা কেজি দরে বীজ বিক্রি হবে।
সাধুবাড়ী গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও ২৫ বিঘা জমিতে আলু লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। কিন্তু বীজ পাচ্ছি না। বেলঘরিয়া এলাকায় রাকিব অ্যান্ড সাকিব স্টোর ও বীজ ডিলার রফিকুল ইসলামের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোনো বীজ পাইনি। শুনলাম তিনি বরাদ্দ পাওয়া সিংগভাগ বীজ কালোবাজারে বিক্রি করেছেন। অবশেষে এক কৃষকের কাছ থেকে কিছু বীজ নিয়ে অর্ধেক জমিতে আলু লাগিয়েছি। বাকি জমি পতিত আছে।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, ব্র্যাকসহ সব কোম্পানি ও বিএডিসির ডিলাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বীজ আলুর (৪০ কেজি) বস্তা প্রতি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্তারা রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন। এমনকি এই অফিসের কর্তাদের ম্যানেজ করেই অসাধু ডিলাররা এই নৈরাজ্য চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন তারা।
এদিকে অভিযুক্ত পরিবেশক ফিরোজ আলী মাস্টার ও রফিকুল ইসলাম তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে গা-ঢাকা দেওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার। পাশাপাশি এ বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনো গণমাধ্যমে বক্তব্য দেবেন না বলেও মন্তব্য করেন।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুবীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, বীজ সিন্ডিকেট ভাঙতে উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছেন। এরই মধ্যে বাড়তি দামে বীজ বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক ডিলারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত