হাসিনা ও দোসরদের পুনর্বাসন নিয়ে কোনো সাফাই নয় : সারজিস

| আপডেট :  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬  | প্রকাশিত :  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের প্রশ্নে, তাদের পক্ষে কারও সাফাই গাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও আমরা এটা করতে দেব না।’

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের শহীদ পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

সারজিস বলেন, ‘খুনি হাসিনা সারা জীবন শুধু নিজের পরিবারের গান গাইতে গাইতে ক্ষমতাটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছিলেন। যেখানে গেছেন, সেখানেই পরিবার নিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। তার পরিবারের ১৮ জন মানুষ, আর এই দুই হাজার জন মানুষ না! এদের খুন করার সময় তার বুকটা একটু কাঁপেনি। আজ আমার যে ভাই শহীদ হয়েছে, যে বোন শহীদ হয়েছে, সেই শহীদ পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোনকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা দেব?’

হাসিনা ১৯৭৫ সালের গল্প বলে ক্ষমতাকে সব সময় সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সেই তিনি দুই হাজার মানুষকে কীভাবে খুন করলেন? তিনি যদি দরদ বোঝেন, তাহলে এ খুনগুলো কীভাবে করতে পারেন? যে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মকে সামনে রেখে তারা এ কাজগুলো করেছে, তাদের কোনো অধিকারই নেই এই বাংলাদেশে চলার।’

সারজিস আলম আরও বলেন, ‘সবার কথা এখানে বলতে পারছি না। কিন্তু সবার আলাদা কষ্ট-ব্যথা আছে, এগুলো বলার মতো না। আবার সবাই বলতেও পারে না, সবাই প্রকাশ করতে পারে না। আমার অনেক বোন আছে, যাদের বিয়ে হওয়ার কয়েক দিন পর স্বামী হারিয়েছেন, তাদের সারা জীবন কীভাবে কাটবে? যে নবজাতক পৃথিবীতে আসার আগে জানতই না সে তার বাবার মুখ কোনো দিন দেখবে না, সে জানতই না কোনো দিন তার বাবা তাকে কোলে নিতে পারবে না, সে কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না, ওর কী দোষ ছিল?’

ভুলে যাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব ভুলে যাই, ওই ১৬ বছর ভুলে গেছি, আমরা ৩৬ দিন ভুলে গেছি, এখন আমরা নতুন কিছু নিয়ে পড়ে আছি। কিন্তু এই জবাব খুনি হাসিনাকে দিতে হবে, খুনি হাসিনার দোসরদের জবাব দিতে হবে। এই বিষয়গুলোর সমাধান ও একটি যৌক্তিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ দেশে তাদের পুনর্বাসনের কথা যারা বলে, খুনি হাসিনার মতো তারা আরেক ধরনের ক্ষমতাপিপাসু, লোভী। এ দেশে তাদের বিচার হওয়ার প্রশ্নে তাদের একটা কথা হওয়া উচিত, তাদের পুনর্বাসনের প্রশ্নে তাদের পক্ষে কারও সাফাই গাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা এটা আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও করতে দেব না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘সবার আলাদা গল্প আছে, কষ্ট আছে, ব্যথা আছে। যার চলে গেছে সে-ই বোঝে, আমরা অনেকে কিছু করতে পারি, অর্থ সহযোগিতা করতে পারি, চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি, সম্মানী ভাতা দিতে পারলেও ওই মানুষটাকে কোনো দিনও ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না, এই ক্ষত কোনো দিনও পূরণ করা সম্ভব নয়। খুনি হাসিনা ও তাদের দোসরদের এর জবাব দিতে হবে, ইশরাত-আব্দুল্লাহ-সামিউলরা কাকে বাবা বলে ডাকবে, কাদের কোলে বাবা বলে উঠবে, কারা দায়িত্ব নিয়ে তাদের বাবার মতো করে সারা জীবন আগলে ধরে রাখবে? শিশু সন্তানরা তার শহীদ বাবার রক্তাক্ত ভিডিওগুলো দেখছে। এই বয়সে তাদের কি এগুলো করার কথা ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে।’

শনিবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বরিশাল বিভাগের ৭৯টি শহীদ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে সারজিস বলেন, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে আমরা ৫ লাখ টাকা করে চেক দিচ্ছি। এটা মাত্র শুরু, কেউ যেন মনে না করে এটাই শেষ। তাদের যত দিন যা কিছু প্রয়োজন, সেই যৌক্তিক চাহিদা পূরণের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। সেটা শুধু আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে নয়, সেটা শহীদ পরিবারের একজনকে চাকরি দিয়ে হোক, তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে হোক কিংবা সম্মানীর ব্যবস্থা করার মাধ্যমে হোক।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে তিনটি বিভাগে দিয়েছি, চতুর্থ বিভাগ হিসেবে বরিশালে এসেছি। আমাদের প্রত্যেক শহীদ পরিবারের বাড়িতে যাওয়া উচিত হলেও প্রথম ব্যক্তি থেকে শেষ পর্যন্ত যেতে অনেক সময় প্রয়োজন হওয়ায় আপাতত বিভাগীয় পর্যায়ে যাচ্ছি।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত