অধরা ওরা ২৫ জন

| আপডেট :  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭  | প্রকাশিত :  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭

চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় এখনো অধরা ঘাতকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলোচিত এ ঘটনার তদন্তে যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এরইমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে আনা হলে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হবে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি তাৎক্ষণিক ঘটেছে- সেটা বের করা সম্ভব হবে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের করেনি তার পরিবার। অন্যদিকে আইনজীবী সমিতির পক্ষেও কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ বলেছে, আইনজীবী হত্যার ঘটনায় তার পরিবার মামলা করতে আসলে তা নেওয়া হবে। তবে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই তিন মামলার বাদী পুলিশ। 

সিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম কালবেলাকে বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা করতে তার পরিবারের লোকজন থানায় আসেননি। আমরা তাদের অপেক্ষা করছি। তাছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলায় অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল–সংলগ্ন বান্ডিল রোড সেবক কলোনি এলাকার একটি গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন। কেউ পেটাচ্ছেন আর কেউ কোপ মারছেন। মাথায় হেলমেট পরা দুই যুবককে দেখা যায় কোপাতে। সাইফুলের নিথর দেহ পড়ে থাকলেও তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে সাইফুলসহ কিছু আইনজীবী প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বান্ডিল রোডে যান। ওই সময় সশস্ত্র লোকজন তাদের ধাওয়া দেন। হোঁচট খেয়ে পড়ে যান সাইফুল। বাকিরা দৌড়ে প্রাণে বেঁচে যান। 

প্রত্যক্ষদর্শী আজমীর হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) কোনো পুলিশ ছিল না। জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে বিজিবির অবস্থান ছিল। তারা তাদের জায়গা থেকে চুল পরিমাণ নড়েনি। রঙ্গম সিনেমা হল–সংলগ্ন বান্ডিল রোড সেবক কলোনি এলাকার গলি থেকে দফায় দফায় হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুডেছে। ঘটনাস্থল থেকে কোতোয়ালি থানার দূরত্ব ১শ গজের মতো। কিন্তু তখনও কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশের কোনো টিমকে তৎপর দেখা যায়নি। সাইফলকে হত্যার পর রির্জার্ভ পুলিশের দল ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।’

থানা সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাস্থল এসি দত্ত লেনের নিলয় স্বজন ভবনের আশপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ, মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ও সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ২৫ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তারা হলেন বিধান, রনব, বিশাল, বিকাশ, রাজ কাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগ লাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাশ, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, চন্দন, জয়, রমিত, বুঞ্জা, লালা, ওমকার দাশ, রুবেল সাহা ও শুভ কান্তি দাস।

হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ও দুটি ছবিতে দেখা যায়, সিলভার রঙের হেলমেট, কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা রামদা হাতে এক যুবক এবং লাল হেলমেট, ব্লু রঙের টি-শার্ট ও জিন্স পরা বটি হাতে আরেক যুবক আইনজীবী আলিফকে কোপাচ্ছেন। পুলিশ প্রথমদিন এদের একজনকে বিকাশ হিসেবে সন্দেহ করলেও আসলে তিনি চন্দন বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অন্যজন বুঞ্জা মেথর।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার রইছ উদ্দিন কালবেলাক জানান, ‘ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পর্যবেক্ষণ চলছে। অনেককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত শনাক্তদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।;

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনজীবী সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন চাইলে নামমঞ্জুর করেন আদালাত। পরে তাকে কারাগারে নিতে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। জামিন নামমজ্ঞুরের খবর ছড়িয়ে পড়লে চিন্ময়য়ের ভক্তরা আসামিবাহী পুলিশ প্রিজনভ্যান গাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত