ইসরায়েলকে ‘গণহত্যায় দায়ী বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ ঘোষণা অক্সফোর্ড ইউনিয়নের

| আপডেট :  ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪১  | প্রকাশিত :  ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪১

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও প্রভাবশালী বিতর্ক সংগঠন অক্সফোর্ড ইউনিয়ন সম্প্রতি একটি বিতর্কে ইসরায়েলকে ‘গণহত্যার জন্য দায়ী বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ ঘোষণা করেছে। 

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই বিতর্কটি ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং বক্তারা একে অপরের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই বিতর্কে প্রস্তাবের পক্ষে ২৭৮টি ভোট পড়ে এবং বিপক্ষে ছিল মাত্র ৫৯টি। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।

অক্সফোর্ড ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র সংগঠন, যা অক্সফোর্ড শহরের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অবস্থিত। এটি ১৮২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও প্রভাবশালী বিতর্ক সংগঠন হিসেবে পরিচিত। 

অক্সফোর্ড ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে, বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে বিতর্কের মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। এবারও তাদের এই বিতর্ক ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড এবং ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। 

বিতর্কে পক্ষে বক্তব্য দেন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান লেখক সুসান আবুলহাওয়া, ফিলিস্তিনি কবি মোহাম্মদ এল কুর্দ এবং ইসরায়েলবিরোধী লেখক মিকো পেলেড। 

বিতর্কে বিপক্ষে ছিলেন ইউকে লইয়ার্স ফর ইসরায়েল-এর আইনি পরিচালক নাতাশা হাউসডরফ, আরব-ইসরায়েলি অ্যাক্টিভিস্ট ইয়োসেফ হাদ্দাদ এবং মোসাব হাসান ইউসুফ, যিনি ইসরায়েলের শিন বেট গোয়েন্দা সংস্থার জন্য ১০ বছর কাজ করেছিলেন এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন।

বিপক্ষের বক্তাদের মধ্যে মোসাব হাসান ইউসুফ বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তিনি প্রশ্ন করেন, যদি আপনরা আগেই জানতেন, তাহলে কি হামাসের নেতৃত্বাধীন ৭ অক্টোবরের আক্রমণকে নিন্দা করতেন? তার প্রশ্নের উত্তরে অল্পসংখ্যক হাত উঠলে, তিনি উপস্থিতদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেন। এ মন্তব্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

অপর বিপক্ষ বক্তা ইয়োসেফ হাদ্দাদ বিতর্কের সময় পোস্টার এবং বিভিন্ন প্রপস ব্যবহার করেন, যার মধ্যে একটি টি-শার্ট ছিল যেখানে নিহত হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর ছবি দিয়ে লেখা ছিল, তোমার সন্ত্রাসী নায়ক মৃত! আমরা এটি করেছি। এর ফলে এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী হাদ্দাদকে বিতর্ক চেম্বার থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

বক্তাদের মধ্যে পক্ষে যারা বক্তব্য দেন তারা ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরেন। ফিলিস্তিনি কবি মোহাম্মদ এল কুর্দ বক্তব্যের পর চেম্বার ছেড়ে চলে যান এবং বিপক্ষকে ‘গণহত্যা অস্বীকারকারী’ বলে অভিহিত করেন। 

অক্সফোর্ড ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম ওসমান-মোয়াফি তার বক্তব্যে ১৯ বছর বয়সী শাবান আল-দালৌমের কাহিনি উল্লেখ করেন, যিনি ইসরায়েলি বিমান হামলায় জীবন্ত পুড়ে মারা যান। তিনি ইসরায়েলের চলমান কর্মকাণ্ডকে ‘হলোকাস্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

এই বিতর্ক সরাসরি রাজনৈতিক ফলাফল না দিলেও এটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে একাডেমিক পরিসরে এটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

বর্তমানে, গাজায় ইসরায়েলি হামলা ৪২৩ দিন পার করেছে, যার ফলে ৪৪ হাজার ৪২৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৫ হাজার ২৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত