সঙের-বিধানের ভারত ভায়া মতিঝিল যাত্রা
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর জন্ম লাভ করিয়া ৫৩ বছর অতিক্রান্ত করিয়া ৫৪ বৎসরে উপনীত হইয়াছে। উচ্চতর বাক্যবিন্যাস, চমৎকার শব্দচয়ন, বিলেতি পোষাক, অঙ্গসজ্বা, কৃত্রিম চাকচিক্যে জন্ম মূহুর্তে-প্রথম দেখায় তাহাকে অতি জ্ঞানী পন্ডিত মনে হইলেও তাহার বালখিল্যতা, অসারতা- পাশ্চাত্যের সাদাদের লেটনাইট পার্টিতে বিয়ারের সহিত পানি মিশ্রিত করিয়া পানরত হঠাৎ করিয়া ঢ়ুকিয়া পরা তামাটে বর্ণের রবাহুতের মত অতিদ্রুত প্রকাশ হইয়া পরে। ফলত: সংবিধানের বয়স ৫৪ বৎসর হইলেও জন্মগত জটিলতা, মনবৈকল্যের রংঢ়ং, ত্রুটির সহিত বহুবিধ সমস্যায় তাহার স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় নাই। তাহাকে শিশুকাল হইতেই প্রায়শই জটিল জটিল সার্জারীর সম্মুখীন হইতে হয় সেসকল অস্ত্রপাচারও বহুরূপী ইচ্ছাধারী ধাত্রী দ্ধারা সম্পন্ন হওয়ায় সে কখনোই মানবিক রুপ পায় নাই পরিনামে সে-হইয়াছে কখনও ভয়ংকর দানব কখনও বা সহজে মানুষ শিকারের মাধ্যমে টিকিয়া থাকা বুড়ো, অপাংক্তেয় মানবখেকো বাঘ। তাহার “উপসংহারের” শুরু জন্ম হইতেই তথাপি যাহারা জন্মদাতা তাহাদের আত্মঅহমিকা অথবা অযথা পাণ্ডিত্য দেখানোর বেহুদা কারনে “সংহার” না হইয়া জন্ম কালে আহা কি অপূর্ব সুন্দর ছিল তাহা ভাবিতে জনগনকে বাধ্য করাইবার একখানা নিম্নস্তরের যাত্রাপালা প্রতিনিয়ত মঞ্চস্ত হইয়াছে।
পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে সকল ধর্ম সকল বর্ন, সকল মতপথের লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি আদম সন্তানের করুন নির্মম মৃত্যু, প্রায় কোটির মত বাংলাদেশি শরনার্থীর ভিটেবাড়ী হইতে দেশান্তরী হওয়া, ক্ষুধা, অর্ধাহার, অনাহার পানীয় জলের অভাবে পথে ঘাটে মৃত্যু, শরনার্থী শিবিরে চরম অব্যবস্থাপনা, অসাস্থ্যকর পরিবেশ, মানবিক বিপর্যয়, জলের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ আর তৃষ্ণা নিবারনের জন্য সেই জলপানহেতু কলিকাতা, বনগাঁও ত্রিপুরার শরনার্থী শিবির সহ সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায় কাতারে কাতারে বাংলাদেশীদের কলেরায় মৃত্যু, মৃতের সৎকার না করিতে পারার কষ্ট, পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংশতা, খুন, ধর্ষন, বর্বরতার মধ্যেও সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের ভিত্তিতে দরদী মানবিক সমাজ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে যে রাষ্ট্রের সংবিধানের ভ্রুণ তৈয়ার হইয়াছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রের মাধ্যমে স্বাধীন হইবার ১ মাসেরও কম সময়ের মধ্যেই ১৯৭২ সালের ১১ই জানুয়ারী তাহা অবৈধ গর্ভপাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয় এবং পুনরায় জঠরে এক অসুস্থ্য ক্লোন টেস্টটিউব ভ্রুণ তৈয়ার করিয়া বাংলাদেশের মাতৃ-জঠরে স্থাপন করা হয়। একথা বলিলে অত্যুক্তি হইবেনা যে যাহার ফলশ্রুতিতেই আজিকার বাংলাদেশের সংবিধান সঙের বিধানে পরিনত হইয়াছে।
সাময়িক সংবিধান প্রনয়ন ও নেতার রুপান্তর:
১০ জানুয়ারী, ১৯৭২। তৎকালীন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু (যদিও তিনি তারপরের দিনই “বঙ্গবন্ধু” হইতে “বঙ্গশাসকে” পরিনত হন -যাহা একান্তই লেখকের মতামত) শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে আসিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পুর সময়ে তিনি ছিলেন পাকিস্তান কারাগারে বন্দী। দেশ স্বাধীন হইবার পরে ডিসেম্বর ২৬ তারিখে তিনি পাকিস্তান কারাগার হইতে মুক্তি পাইয়া পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রীয় বাংলোতে অবস্থান করেন
সেই সময় হইতে ১০জানুয়ারী দেশে আসার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত তাহার সঙ্গী ছিলেন ড:কামাল হোসেন। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রীসভায় যিনি আইনমন্ত্রী হন। ১৯৭২ সনের ১০ই জানুয়ারী তিনি দেশে ফেরত আসিবার পূর্বে তাহারা উভয়ে সিদ্ধান্ত লইয়া ফেলেন যে নতুন দেশ প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থায় পরিচালিত করিবেন (বাংলাদেশ কোয়েস্ট ফর ফ্রিডম এন্ড জাষ্টিস-ড:কামাল হোসেন)। দূর্ভাগ্যজনক হইলেও সত্যি যে এই সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ রুপে স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত কেননা তাহারা উভয়ে কেবলযে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নাই তাহাই নহে বরং তাহারা যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের জনগনের সম্মিলিত ঐক্যেকেও অবজ্ঞা অবহেলা করিয়াছিলেন। সাড়ে সাতকোটি বাংলাদেশী জনগন ১৯৭১ সালে অবর্ননীয় কষ্ট বেদনার মৃত্যু উপত্যকায় শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করিয়া কেবলযে পাকিস্তানিদের পরাজিত করিয়াছিল তাহাই নহে বরঞ্চ সকল জনগন মনস্তাত্বিক ভাবে বিপ্লবী চেতনায় উজ্বীবিত হইয়া গিয়াছিল আর সেইকারনেই জন্ম নেওয়া নতুন দেশের শাসন ব্যবস্থা কিরুপ হইবে তাহার সিদ্ধান্ত সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ কারী সকল মত ও পথের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই না লইয়া এক বা দুই জনের সিদ্ধান্ত চাপাইয়া দেওয়া সম্পূর্ণ রুপে অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী মনোভাবেরই ছিল পরিস্কার প্রতিফলন। শেখ মুজিবুর রহমান দেশে আসিয়াই সেই সিদ্ধান্ত অতিদ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অগ্রসর হইলেন। তিনি বুঝিতে চাহিলেন না কিংবা পারিলেন না তিনি যখন পাকিস্তান সরকারের দেশদ্রোহীতার দায় হইতে বাঁচিবার লক্ষ্যে তাহার নিজ পছন্দের আইনজীবী এ.কে. ব্রোহীকে (নিউইয়র্ক টাইমস ২১ অগাষ্ট ১৯৭১) নিয়োগ করিতে পারিবেন কি-না তাহা লইয়া অতিশয় চিন্তাগ্রস্ত তখন দেশে একখানা সশস্ত্র বিপ্লব সংঘটিত হইয়া গিয়াছে, তাহার অবর্তমানে সম্পূর্ন ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের জনগন তর্কাতীত সফল সরকার গঠন করিয়া তাহাদের অধীনে নিজ নিজ তাগিদে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করিয়া নিজ রক্ত, সম্ভ্রম, সম্পদের বিনিময়ে পাকিস্তান মিলিটারীকে নাকানি চুবানি খাওয়াইয়া একটা গোটা দেশ স্বাধীন করিয়া ফেলাইয়াছে এবং সেই সফল সরকারের রাষ্ট্রপতি স্বয়ং তিনি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করিয়াও!! তিনি বুঝিতে অক্ষম যে যুদ্ধকালীন সময়ে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, সৈনিক সহ বাংলাদেশের সকল পেশার সকল শ্রেনীর সাধারন মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া রনাঙ্গনে যুদ্ধ করিয়াছে, যোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়াছে আহার যোগাইয়াছে অথবা কোন অসহায় সংখ্যালঘু পরিবারের সমব্যাথী হইয়া নিরাপত্তা দিয়াছে, পদে পদে বিপদ হইতে পারে বুঝিয়াও নিজ নিজ গৃহে স্থান দিয়াছে তাই কেবল নিজ দলের নেতা নয় সকল মতপথের লোকজন লইয়াই দরকার বিপ্লবী জাতীয় সরকার। তিনি বুঝিতে অক্ষম হইলেন যুদ্ধে কেবল তাহার দলের কর্মী নয় পুরো বাংলাদেশীরাই কোন না কোন কাঠামোয় জড়িত, তিনি বুঝিতে চাহিলেন না প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার, রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার লইয়া জনগন মোটেও চিন্তিত নয় জনগন চাহে সকলকে লইয়া ইনসাফ সাম্য যথাযথ মর্যদার ভিত্তিতে মানবিক সমাজ দেশ গঠন।
প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক শেখ মুজিবুর রহমান কি তবে বোকা ছিলেন? তাইবা কিভাবে সম্ভব তিনিতো উল্টো বোকা বানাইয়াছিলেন পাকিস্তানের মাথামোটা জেনারেলদের। তাই তিনি অবশ্যই বুঝিতে পারিয়াছিলেন ঐসকল সমস্ত বিষয়। তিনি ইহাও জানিতেন যে কার্যকরী সংসদ বিহীন ওয়েষ্ট মিনিষ্টার ধাঁচের প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার শুনিতে যতই মধুর লাগুক না কেন মুলত একজনের শাসন হয় সংসদীয় একনায়কতন্ত্র হয় কোন জবাবদিহি থাকেনা আর তখনতো কার্যকরীতো দুরকিবাত কোন সংসদের অস্তিত্বও নাই তাই তিনি সজ্ঞানে তা-ই চাহিয়াছিলেন!! তিনি আরও জানিতেন তার অবর্তমানে তাজউদ্দিন আহমদরা সরকারকে নেতৃত্ব দিয়া দেশ স্বাধীন করিয়াছেন তাই তার সকলের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন প্রয়োজন। নেতার প্রয়োজন বুঝিয়া তাহার সঙের বিধান তৈয়ার করিবার আইনজীবী ধাত্রীগন অতি দ্রুত পদ্ধতি বাতলাইলেন। ১১ জানুয়ারী ১৯৭২ সনে করিলেন এক অদ্ভুত আজব নজিরবিহীন সাময়িক সংবিধান। ১২ জানুয়ারী ১৯৭২ বাংলাদেশের নেতা পিতা হইয়া আগমনের মাত্র কয়েক ঘন্টার ভিতরেই বঙ্গভবনে চলিল এক আজব পরিকল্পিত সার্কাস (যদিও নিন্দুকেরা আড়ালে আবদালে বলাবলি করেন যাহার তুলনা চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের ওয়াজিউল্লাহ ইন্সটিটিউটের বিচিত্রানুষ্ঠানের প্রিন্সেসের নাচের সাথে তুলনীয়)। চলিল শপথ-পদত্যাগ আর শপথের এক শ্বাসরুদ্ধকর নাটিকা। নেতা সাময়িক সংবিধানের আলোকে হইলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। ৬৯ এর বঙ্গবন্ধু ৭১ এর জাতির পিতা ৭২ এর ১২ জানুয়ারী সাময়িক সংবিধানের বদৌলতে রুপান্তরিত হইলেন ক্ষমতালিপ্সু একনায়ক শাসকে বিলেত ফেরত যুদ্ধ যাইবার সাহসের অভাবে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলিয়া যাওয়া এলিট মাথায় বাড়ি খাইয়া জ্ঞান হারাইলো গণমানুষের বিপ্লব বেহাত হইল জনগনের আকাঙ্খা প্রত্যাশা অভিপ্রায়। মুষ্টিমেয় কতিপয় স্বার্থান্বেসী মানুষের খপ্পরে পরিল গোটা দেশ ও জাতী।
দেখিতেছে তাহাদের রচিত সংবিধান সিন্দাবাদের ভুতের ন্যায় রাস্ট্রের ঘাড়ে চাপিয়া বসিয়া রহিয়াছে। জনগন প্রত্যক্ষ করিতেছেন ইত্যবসরে জনতার নতুন সরকার সেই ভুত তাড়াইবার নিমিত্তে সূদূর আটলান্টিকের ওপার হইতে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীকে উড়াইয়া লইয়া আনিয়াছেন। জনগন আশাবাদী হইয়াছেন কেননা বিজ্ঞানী এবং তাহার সভ্যগন নতুন করিয়া সংবিধান প্রনয়নের কিংবা সংস্কারের দায়িত্ব লইয়া সংবিধান কিভাবে সংষ্কার করা হইবে তাহা লইয়া প্রতিদিনই কখনও গোল কখনও বা উলম্ব কিংবা কখনও বা একক বিশেষজ্ঞের সহিত সৌজন্য সাক্ষাৎ- বৈঠকের মাধ্যমে সংবিধানকে গবেষণাগারে পরীক্ষা নীরিক্ষা করিতেছেন। “ঘ্রানেণ অর্ধ ভোজনং” মত জনতা আশায় বুক বাধিয়াছে, সকলেই আশাবাদী এইবার কিছু এক্কান হইবেই হইবে। কেননা তাহারা মনে করিতেছেন বিজ্ঞানী মহোদয় এবং সভ্যগন একেকজন অতি জ্ঞানী মানব। তাহারা তাহাদের অতুলনীয় মেধা এবং জ্ঞান দ্ধারা ১৮ কোটি জনসংখ্যার সকল শ্রেণীর সকল বাংলাদেশীদের চাওয়া পাওয়ার সমন্বয় সাধন করিয়া একখানা কালোত্তীর্ণ সংবিধান করিতে সক্ষম হইবেন। তথাপি কতিপয় সংশয়বাদীরা তাহাতে মোটেও আশাবাদী হইতে পারিতেছেন না তাহারা মনে করিতেছেন প্রয়াত জননেতা ইতিহাসশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান সালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ” মিয়া তত্ব” না খাঁটিয়া যায়।
সঙ-বিধানের প্রসব:
সংবিধান প্রনয়নের জন্য নতুন গনপরিষদ নির্বাচনের নতুন ম্যান্ডেট দরকার আওয়ামী লীগ বাদে অন্যান্য ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক দল, মত পথের যৌক্তিক দাবীকে সাময়িক সংবিধান দ্ধারা রুদ্ধ করিয়াই তৎকালীন আওয়ামী সরকার ক্ষ্যান্ত হইলেন না তাহারা ১৯৭২ সালের ২২ মার্চ করিলেন গনপরিষদ আদেশ এবং বাংলাদেশ গনপরিষদ সদস্য (সদস্যপদ বাতিল আদেশ) সেই আইন করিয়া গনপরিষদের সভ্যদের কর্ম কিরুপ হইবে তাহাও নির্ধারন করিলেন। তাহাদের রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে সরকারের জবাবদিহিতা চাওয়াতো দুরের কথা স্বাধীন মতামত প্রদান রহিত করা হইল এক কথায় তাহাদের কর্ম হইল কেবল টেবিল চাপরাইয়া সংবিধান গ্রহন করা। সভ্যদের কেহ কেহ ইহাতে আপত্তি তুলিলে তাহাদেরকে গনপরিষদ হইতে বহিস্কার করা হইল। তাহার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয় ২৩ জন।কেননা তাহারা উক্ত আইনের ৩(১) ধারার লংঘন করিয়াছিল তাহার বর্ণণা “কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে এবং উক্ত দলের সদস্যপদ লাভ করে কোন ব্যক্তি পরিষদ-সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি যদি (ক) উক্ত দল থেকে পদত্যাগ করেন; অথবা (খ) উক্ত দল হতে বহিষ্কৃত হন;
তবে তার মেয়াদকালের অসমাপ্ত সময়ের জন্য তিনি আর পরিষদ-সদস্যপদে থাকবেন না। আইনটির ৫ ধারা অনুযায়ী এই আইনের অধীনে প্রণীত কোন আদেশ বা গৃহীত কোন ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না-অতএব চলিল সংবিধান প্রনয়নের সার্কাস!! তাহাতে ৭০ অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করাইয়া আক্ষরিক অর্থেই সংবিধানকে “সঙের বিধান” করা হইল। বলিয়া দেওয়া হইল দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাইয়া কোন সংসদ সদস্য আইনসভায় ভোট দিলে তাহার সদস্য পদ বাতিল হইবে। জন্ম লাভ হইল এক নেতা এক দেশ করিবার ব্যক্তি উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার গনবিরোধী সংবিধানের, ঢাল হইয়া রহিল ধর্মনিরপেক্ষতা, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর বাঙালী জাতীয়তাবাদ!!
২০২৪ এর গন অভ্যুত্থান ও পরবর্তী ঘটনা:
১৯৭২ এর পরে পদ্মা মেঘনা যমুনা ব্রম্মপুত্র, কর্ণফুলিতে যেমনি অনেক জল গড়াইয়াছে তেমনি বিগত ১৬ বৎসর বাংলাদেশীগন প্রত্যক্ষ করিয়াছে; সংসদীয় একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আর রাস্ট্রের যুগপৎ দূ:শাসন, জবরদস্তি, ভোটডাকাতি, চুরি, লুটপাট, সন্ত্রাস, টেন্ডাররবাজি, সিন্ডিকেট, কমিশন, অবৈধ ব্যবসা, বিচারের নামে প্রহসন। দেখিয়াছে গরীবকে সর্বসান্ত করিয়া জমি দখল, বিরুদ্ধ মতকে হত্যা, গুম, খুন বা জেলে পুরিয়া রাখার মাধ্যমে জনগনকে গলা টিপিয়া রাখার নিষ্ঠুর শাসন। ফলাফলে হাজার হাজার মৃত্যু, অনেক অনেক রক্ত পাত, অঙ্গহানি আর অশ্রু বিসর্জনে ক্লান্ত, অপমানিত, ক্রুদ্ধ, নিপিড়ীত অধিকারহীনতায় ফুঁসিয়া উঠা জনগনের প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড়ের কবলে পরিয়া ২০২৪ সালে অগাষ্ট মাসে স্বৈরাচারী আওয়ামী শাহীর রাজত্বের করুন বিদায় হইয়াছে। বিদায়ের পূর্বক্ষনে গদী রক্ষার নিমিত্তে পতিত শেখগন (মধ্যপ্রাচ্যের শেখ নহেন) তাহাদের সকল হায়েনাদিগকে অস্ত্রসস্ত্র গুলি বোমা সমেত নিরস্ত্র জনগনের উপর লেলাইয়া দিয়াও শেষ রক্ষা করিতে ব্যর্থ হইয়া তাহাদের সুপ্রিমো তাহার দূর্বৃত্ত নিকটাত্মীয় পরিবার পরিজন সমেত ব্যাপক ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতাপশালী মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার, বিচারপতি, আমলা এমনকি অতি ক্ষুদ্র দূর্বৃত্ত আতি পাতি নেতা সহ পলাতক দেশান্তরী, তথাপি জনগন দেখিতেছে তাহাদের রচিত সংবিধান সিন্দাবাদের ভুতের ন্যায় রাস্ট্রের ঘাড়ে চাপিয়া বসিয়া রহিয়াছে। জনগন প্রত্যক্ষ করিতেছেন ইত্যবসরে জনতার নতুন সরকার সেই ভুত তাড়াইবার নিমিত্তে সূদূর আটলান্টিকের ওপার হইতে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীকে উড়াইয়া লইয়া আনিয়াছেন। জনগন আশাবাদী হইয়াছেন কেননা বিজ্ঞানী এবং তাহার সভ্যগন নতুন করিয়া সংবিধান প্রনয়নের কিংবা সংস্কারের দায়িত্ব লইয়া সংবিধান কিভাবে সংষ্কার করা হইবে তাহা লইয়া প্রতিদিনই কখনও গোল কখনও বা উলম্ব কিংবা কখনও বা একক বিশেষজ্ঞের সহিত সৌজন্য সাক্ষাৎ- বৈঠকের মাধ্যমে সংবিধানকে গবেষণাগারে পরীক্ষা নীরিক্ষা করিতেছেন। “ঘ্রানেণ অর্ধ ভোজনং” মত জনতা আশায় বুক বাধিয়াছে, সকলেই আশাবাদী এইবার কিছু এক্কান হইবেই হইবে। কেননা তাহারা মনে করিতেছেন বিজ্ঞানী মহোদয় এবং সভ্যগন একেকজন অতি জ্ঞানী মানব। তাহারা তাহাদের অতুলনীয় মেধা এবং জ্ঞান দ্ধারা ১৮ কোটি জনসংখ্যার সকল শ্রেণীর সকল বাংলাদেশীদের চাওয়া পাওয়ার সমন্বয় সাধন করিয়া একখানা কালোত্তীর্ণ সংবিধান করিতে সক্ষম হইবেন। তথাপি কতিপয় সংশয়বাদীরা তাহাতে মোটেও আশাবাদী হইতে পারিতেছেন না তাহারা মনে করিতেছেন প্রয়াত জননেতা ইতিহাসশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান সালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ” মিয়া তত্ব” না খাঁটিয়া যায়। তিনি (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগনের অবসরের বয়সের সীমা বাড়াইয়া দেওয়া বিষয়ক সংশোধন বহাল রাখিয়া জিয়াউর রহমান জমানার ৫ম আর এরশাদ আমলের ৭ম সংশোধনী বাতিলের রায়ের সমালোচনা করিয়া এক বক্তব্যে বলিয়াছিলেন “সোনা মিয়ার” জায়গা রেজিষ্ট্রারী হইয়া গিয়াছে “লাল মিয়ার” নামে আর “লাল মিয়ার” জায়গা রেজিষ্ট্রারী হইয়া গিয়াছে “সোনা মিয়ার” নামে। ইহা লইয়া মামলায় বিচারক রায় দিলেন এইভাবে “মিয়াতো” ঠিকই আছে “সোনা” কাঁটিয়া “লাল” করিয়া দেও”। তিনি স্বভাবগত মজাদার হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমায় বলিয়াছিলেন বিচারপতিগন নিজেদের অবসরের সময়সীমা ঠিক রাখিলেন মানে ” মিয়া” টা ঠিক রাখিয়া “সোনা”কে “লাল” করিয়া দিলেন। সংশয়বাদীদের এই সংশয়ের যৌক্তিকতা উড়াইয়া দিবার মত নহে কেননা ২৪ এর গন অভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্রপতি সংবিধান বহাল রাখিয়া সরকার পরিচালনা হইতেছে। অর্থ্যাৎ “শেখ হাসিনা” কাঁটিয়া গেল “ড:ইউনুস” চলিয়া আসিলেন “সংবিধান-রাষ্ট্রপতি” রহিয়া গেল। মানে “মিয়া” রহিয়া গেল। অথচ:যেখানে গন অভূত্থান সংবিধানকে অতিক্রম করিবার কথা। সংশয়বাদীদের এই যুক্তির বিপরীতে সবচাইতে বড় অস্ত্র এই বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মতামত। কিন্তু সেই মতামত পড়িলে আশ্চর্য হইতে হয় তাহাতে গন অভূত্থান, এত হাজার হাজার মৃত্যু শহীদ পঙ্গুত্ব বরনের জন্য একটা শব্দও লিখিত নাই। সবচাইতে বড় কথা যে আপিল বিভাগ এই মতামত দিয়াছিলেন তাহারাই আবার ছাত্র জনতার গনদাবীর মুখে পদত্যাগ করিয়া আত্মগোপনে চলিয়া গিয়াছেন। তাহা হইলে এই মতামতেরই বা কি মূল্য রহিল! তাই তাহাদের এই মতামত মুল বিষয় পাশ কাটাইয়া সহজ সমাধান “সোনা” কাঁটিয়া “লাল” করিয়া দেওয়ার মতই” অপ্রয়োজনীয় গুরুত্বহীন বলিয়া মনে করেন সংশয়বাদীগন। তাহাছাড়াও তাহাদের আরও কুযুক্তি রহিয়াছে তাহা হইল ১৯৭২ সালে খসড়া সংবিধান প্রনয়ণের পরে আইনমন্ত্রী ড: কামাল হোসেন ভারত যুক্তরাজ্য গমন করিয়াছিলেন। সেই সফরের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ভারত যুক্তরাজ্যের গনতান্ত্রিক চর্চা সাম্যক পর্যবেক্ষন করার। মাওলানা ভাষানীর “হক কথা” পত্রিকায় তখন এর নিন্দা করিয়া লিখা হইয়াছিল “সংবিধানের ভারত যাত্রা”। বর্তমান সরকারের সংবিধান বিষয়ক কমিশনের সকলে দল বাঁধিয়া ড:কামাল হোসেনের মতিঝিল অফিসে ছুটিলেন, পরামর্শ লইতে। বর্ষীয়ান বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ লইতেই পারেন ইহাতে আপত্তি থাকিবার যেমন কোন কারন নাই তথাপি ইহাও সত্য যুবক অবস্থায় তিনি যে সংবিধানের প্রধান ধাত্রী ছিলেন সেই সংবিধান এবং তাহা গৃহীত করার পদ্ধতি শেখ মুজিবুর রহমানকে চরম একনায়কে পরিনত হওয়া হইতে বারিত করিতে কেবল যে ব্যর্থ হইয়াছিল তাহাই নহে উল্টো সহযোগী হইয়াছিল ইহাও ঐতিহাসিক সত্য। সংশয়বাদীদের সংশয় নতুন সংবিধান “মতিঝিলে” গোঁত্তা খাইয়া “ভারত” অব্দি না পৌঁছায়!!
লেখক: এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং ভিন্নমত পোষণের দায়ে আওয়ামী সরকারের বরখাস্তকৃত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
পূনশ্চ:
জিনিস পত্রের সীমাহীন মূল্য, ব্যাংক লুটকারীদের কারনে গচ্ছিত রাখা সামান্য টাকা তুলিতে না পারা, রাস্তায় যানযট, সংসার চালাইতে হিমশিম খাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ বেশুমার চাপের স্বীকার জনগনের উপর সংবিধান লইয়া সংশয় বাদীদের চাপ সামলাইবার জন্য শেফালী ঘোষের এই গান খানা টনিকের মত কাজ করিতে পারে ” ও মানুরে ও সুন্দর মানু, কি ছবি বানাইবা তুঁই আঁই ন বুঝি, এক্কইবারে লইযাও আঁরে, আঁইতো রাজী। ও মানুরে ও সুন্দর মানু…”
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত