সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য: বাংলাদেশে ফর্টিফায়েড আটা-ময়দা উদ্বোধন

| আপডেট :  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৫  | প্রকাশিত :  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৫

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনা হয়েছে ফর্টিফায়েড আটা-ময়দা। এই উদ্যোগটি ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন গেইনের কারিগরি সহায়তায় দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায় একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হয়।

খাদ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা অনুপুষ্টি বিশেষত জিংক, আয়োডিন, ভিটামিন এ, ও ফোলেটের ঘাটতি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ স্থূলতা, ওজনাধিক্য এবং কম ওজন ইত্যাদি অপুষ্টিজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার। অপুষ্টির কারণে একটি জাতির বছরে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে এবং ৩-১৬% পর্যন্ত জিডিপি হ্রাস ঘটাতে পারে। 

২০১৯-২০ এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে বাংলাদেশে, প্রায় ৭০% নন-প্রেগনেন্ট নন- ল্যাটেটিং (NPNL) নারীদের দুই বা ততোধিক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ঘাটতি রয়েছে এবং ২৪% নারীর যে কোনো একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি রয়েছে। BDHS, ২০২২ এর তথ্যমতে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৪% খর্বকায়, ১১% কৃশকায় এবং ২২% কম ওজন দেখা যায়।

ফর্টিফায়েড ফুড মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করেই তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। এ ছাড়া এতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, পাশাপাশি এটি রোগপ্রতিরোধ, উপার্জন বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতি ১ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ২৭ ডলার অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশে আটা-ময়দা ফর্টিফিকেশনের বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ডটি ১০টি প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট দ্বারা সমৃদ্ধ, যেমন বি৬, বি১২, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন, থিয়ামিন, ভিটামিন এ এবং জিংক। এগুলো সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ফর্টিফায়েড আটা-ময়দা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি, প্রতিরোধক্ষমতা, রক্তস্বল্পতা ও জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ এবং শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ নিশ্চিত করতে সহায়ক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআইএর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) জনাব এস এম ফেরদৌস আলম, ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস এর ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তানভীর আহমেদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব রিয়াজুল এইচ চৌধুরী, এবং গেইন বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা; ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল, বারডেম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জনস্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টসের সিওও জনাব মাহবুব বাসেত এবং গেইন-এর পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান। এরপর গেইন-এর প্রোজেক্ট ম্যানেজার জনাব আবুল বাশার চৌধুরী ‘বাংলাদেশে খাদ্য ফর্টিফিকেশন’ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন।

ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড বাংলাদেশে বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ময়দা শিল্পে প্রবেশ করে এবং এরপর থেকে ইফাদ
আটা, ময়দা, ও সুজি উৎপাদনে একটি বিশ্বস্ত নাম হয়ে উঠেছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজতকরণের মাধ্যমে নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত, এবং মানসম্মত আটা,ময়দা, ও সুজি সরবরাহে ইফাদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইফাদ ক্রমাগত উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভোক্তাদের প্রয়োজন মেটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) গেইন একটি সুইসভিত্তিক ফাউন্ডেশন এবং আন্তর্জাতিক এনজিও, মানুষের অপুষ্টিজনিত দুর্ভোগ মোকাবেলা করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০২ সালে জাতিসংঘে গেইন -এর কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাস্থ্যকর খাবারকে সকলের জন্য সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং কাঙ্ক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে গেইন সরকার, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং অংশীজনদের সাথে কাজ করে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে গেইন ফুড ফর্টিফিকেশনে কাজ করে যাচ্ছে। ভোজ্য লবণ ও ভোজ্যতেল ফর্টিফিকেশনে গেইন ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ফর্টিফাইড আটা-ময়দা চালুর মাধ্যমে গেইন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত