গৃহকর্মী কল্পনা নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

| আপডেট :  ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৩  | প্রকাশিত :  ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৩

অবিলম্বে গৃহকর্মী কল্পনা নির্যাতনের বিচার প্রক্রিয়া চালু এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ‘গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামে’র সভাপতি জাকিয়া সুলতানা।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ‘গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম’র আয়োজনে শিশু গৃহকর্মী কল্পনা নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিকাল ৩টায় একটি প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের সভাপতি জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের নেতারাসহ মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা ও খিঁলগাও এলাকার প্রায় ৭০ গৃহকর্মী। 

গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গৃহকর্মী অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক আবুল হোসাইন, জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুরশিদা আখতার, বাংলাদেশ লেবার স্টাডিজের প্রকল্প কর্মকর্তা মনিরুল কবীর, ব্লাস্টের আউটরিচ অফিসার মো. আমানুল্লাহ ও গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। 

জাকিয়া সুলতানা সভাপতির বক্তব্যে গৃহকর্মী কল্পনার নির্যাতনের বিভৎস চিত্র তুলে ধরেন। সে সঙ্গে যে অধিকারগুলো গৃহকর্মীদের প্রাপ্য তা বিশদভাবে বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি শিশু গৃহকর্মী কল্পনা নির্যাতনের যেন অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়া চালু করা হয়, ৯০ দিনের মধ্যে যেন তদন্তের রিপোর্ট জাতির কাছে তুলে ধরা হয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়- সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, শ্রম মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।  

স্বপ্না আখতার নিয়োগকারীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, নিয়োগকারী যখন গৃহকর্মী নিয়োগ দেন তখন তারা তাদের প্রতি কেন দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় না, কেন মারধর করে, নির্যাতন করে? 

তিনি নিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তারা যদি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলান তবে বদলে যেতে পারে গৃহকর্মীদের জীবন। তাই, গৃহকর্মীদের শ্রম আইনে যদি এখনি অন্তর্ভুক্ত করা হয় তহলে এ নির্যাতন বন্ধ করা হয়তো সম্ভব হবে। 

আবুল হোসাইন বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ গৃহশ্রমিক রয়েছে। তাদের যে আয় তাতে তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। কিন্তু তারপরও খেয়েপরে বেঁচে আছে বাংলাদেশের এই গৃহশ্রমিকরা। কিন্তু যখন এই গৃহকর্মীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের খবর উঠে আসে যারা অধিকাংশই নারী ও শিশু, তখন তা সহ্যাতীত হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, গত ২৫ বছর ধরে গৃহকর্মীদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমি লড়াই করে আসছি, যার ফলে গৃহকর্মীদের জন্য একটি নীতিমালা অর্জন করতে পারলেও, অর্জন করতে পারিনি নীতিমালার প্রয়োগ। বিগত সরকারের বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশের এই সরকারের কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি যেন অনতিবিলম্বে গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মুরশিদা আখতার শিশু গৃহকর্মী কল্পনার নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। 

মানববন্ধনে ছয়টি দাবি উত্থাপিত হয়। দাবিগুলোর মধ্যে অতি দ্রুত গৃহকর্মী কল্পনা নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায্যবিচার করা। গৃহকর্মীর প্রতি যৌন, শারীরিক ও মানসিকসহ সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করা।

কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে নির্যাতনকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করতে হবে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ১ মাসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-১ (ণ) বাতিল করে গৃহ শ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেওয়া। লিখিত চুক্তিপত্র বাধ্যতামূলক করা।

সব ধরনের গৃহকর্মীদের (আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন, স্থায়ী) জন্য লিখিত চুক্তিপত্র বাধ্যতামূলকভাবে স্থায়ী ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিস ও থানার মাধ্যমে নিশ্চিত করা। নিয়োগকারীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা। যেন নিবন্ধিত অপরাধী নিয়োগকারীর নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের মাধ্যমে শাস্তির সুযোগ তৈরি করা যায়।

‘গৃহকর্মী কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা’ ২০১৫-এর যথাযথ বাস্তবায়ন করা। নীতিমালার আওতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি মনিটরিং সেল গঠন ও এর কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করা। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত