কীভাবে কাটাবেন ঈদুল ফিতর

| আপডেট :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০  | প্রকাশিত :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০

ঈদুল ফিতর মানে রোজা ভাঙার আনন্দ। এ আনন্দ প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে বছরে একবার দেখা দেয়। পুরো একটি রমজানের রোজা শেষে এই ‘ঈদ’ হলো মুমিনের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার। মহান আল্লাহ তার বান্দাকে এ নিয়ামত দিয়ে অনুগ্রহ করেন। রাসুল (সা.) মদিনা শরিফ হিজরতের পর প্রথম হিজরিতেই শুরু হয় ঈদ। আগের কোনো নবীগণের সময় ঈদের প্রচলন ছিল না। রাসুল (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে যখন মদিনায় গেলেন, তখন মদিনাবাসীরা ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুটি দিবস উদযাপন করতে দেখলেন, যে দিবসগুলোতে তারা শুধু খেলাধুলা, আমোদ-ফুর্তিতে মেতেছিল। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুদিনের কি কোনো তাৎপর্য আছে? মদিনাবাসীরা উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলি যুগে এ দুদিন খেলাধুলা করতাম। তখন তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ এ দুদিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ দুটি দিন দিয়েছেন। আর তা হলো—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (আবু দাউদ: ১১৩৪)। ‘ঈদুল ফিতরে’ রাসুল (সা.) আমাদের কী কী করণীয় এবং বর্জনীয় কর্মসূচি দিয়েছেন তা জেনে নেওয়া যাক:

ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ: ঈদের বিধান দেওয়া হয়েছে আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য। মানুষকে উত্তম খাবার খাওয়ানো ও মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে খাবার গ্রহণ করার জন্য। ঈদের দিন রোজা রাখলে সাম্য ও সম্প্রীতির এ নিদর্শন বাকি থাকে না। তাই এদিন রোজা নয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।’ (বোখারি: ১৯৯২)। আলেমরা এ ব্যাপারে একমত, ‘দুই ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।’

ঈদগাহের রাস্তা পরিবর্তন করা: ঈদগাহে যাওয়া এবং আসার রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নত। যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে আর আসার সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা সুন্নত। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বোখারি: ৯৮৬)। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা সুন্নত। কারও কোনো সমস্যা না থাকলে, নিজ পায়ে হেঁটে ঈদগাহের ময়দানে যাওয়া সুন্নত। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি: ১২৯৫)।

ঈদগাহে শিশুদের সঙ্গে নেওয়া: শিশুদের ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনু আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস, আব্বাস, আলি, জাফর, হাসান, হোসাইন, উসামা ইবনু জায়দ, জায়দ ইবনু হারিসা, আয়মান ইবনু উম্মু আয়মান (রা.) প্রমুখ শিশু-কিশোর সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির ও তাহলিল পাঠ করতে করতে বের হতেন। অতঃপর তিনি কামারদের রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হতেন এবং প্রত্যাবর্তনের সময় মুচিদের রাস্তা দিয়ে ঘরে আসতেন। (বায়হাকি: ৬৩৪৯)।

ঈদের রাত থেকে তাকবির পড়া: চাঁদ রাতে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সকালে ঈদের নামাজ পড়া পর্যন্ত এই তাকবির পাঠ করতে হবে। পুরুষরা মসজিদে, হাটবাজারে, রাস্তাঘাটে অর্থাৎ সর্বত্র উচ্চৈঃস্বরে তাকবির পাঠ করবে। কেননা তাকবির পাঠের মাধ্যমে যেমন ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা হয়, তেমনিভাবে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাকবির হলো—‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ পুরুষগরা উচ্চৈঃস্বরে তাকবির পাঠ করবেন এবং নারীরা চুপে চুপে তাকবির দেবেন।

পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা: মুসলমান মুসলমানের ভাই ভাই। পরস্পর সালাম বিনিময় করবে। সালাম বিনিময়ের পাশাপাশি রয়েছে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। আর এ শুভেচ্ছা বিনিময় করায় অসুবিধা নেই। কারণ সাহারিরা ঈদ উপলক্ষে তা করতেন। তারা এই বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতেন— ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’, অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের এবং আপনার (ইবাদত-বন্দেগি) কবুল করুন।’ (বায়হাকি: ২/৩১৯)

উত্তম পোশাক ও খাবারের আয়োজন: ঈদের দিন উত্তম পোশাক ও উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করা। অপচয় যেন না হয়, সেদিকে যথাযথ খেয়াল রাখা। তবে ঈদের দিন নতুন পোশাক পরিধান করা আবশ্যক নয়। বরং পুরাতনের ভেতর যেটা ভালো, সেটিই পরিধান করা। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, একবার ওমর (রা.) মদিনার বাজার থেকে একটি রেশমের কাপড় আনলেন রাসুলের (সা.) জন্য। ওমর (রা.) রাসুল (সা.)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই পোশাকটি আপনি ঈদের দিন এবং বাইরে থেকে বিভিন্ন কবিলার প্রতিনিধিদল আসলে পরিধান করবেন। রাসুল (সা.) বললেন, এই পোশাক পরিধান করবে সে ব্যক্তি, আখিরাতে যার অংশ নেই। (বোখারি: ৯৪৮)।

ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টিমুখ: ঈদুল ফিতরে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্বে কিছু খেয়ে নেওয়া সুন্নত। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না। আর তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন।’ (বোখারি: ৯৫৩)। তবে ঈদুল আজহায় তিনি ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছুই খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে নিজের কোরবানির গোশত খেতেন।

ঈদ আমাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলুক—এই প্রার্থনা।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত