ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির এই মানসিকতাকে স্বাগত জানাই : হাসনাত
জুলাই-আগস্টের গৌরবময় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ‘তথাকথিত আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস। ছাত্রদল সভাপতির এই দুঃখপ্রকাশ করার মানসিকতাকে শ্রদ্ধা ও স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে প্রোফাইলে এক পোস্টে তিনি এসব কথা জানান।
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিসরে আমরা নীতি-নৈতিকতার চর্চা দেখতে চেয়েছি, সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে নিজের ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত ভুল অকপটে স্বীকার করার পরিসর দেখতে চেয়েছি। জুলাই বিপ্লবকে ‘তথাকথিত’ বলে আখ্যায়িত করার পর ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি দুঃখপ্রকাশ করেছেন, কোনো ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে নিজের ভুলকে প্রতিষ্ঠিত করার বদলে তা বিনা দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির এই মন-মানসিকতাকে আমরা শ্রদ্ধা করি এবং স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, আগামীতেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন সততা ও স্বচ্ছতার চর্চা বজায় থাকবে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে জুলাই আগস্ট বিপ্লব হয়ে যাওয়ার এত মাস পরেও বিপ্লব নিয়ে না আছে কোনো ঘোষণা, না আছে কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। যে যখন পারে যেভাবে ইচ্ছা এই দ্বিতীয় রিপাবলিকের উত্থানের পেছনের লক্ষ কোটি সাধারণ জনতার সংগ্রামকে অপমান করে যাচ্ছে কিংবা তাচ্ছিল্য করে যাচ্ছে।
২০১০-১১ তে জেসমিন বিপ্লবের পরে তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক বেন আলীর দীর্ঘ স্বৈরাচারী রেজিমের পতন ঘটে এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তিউনিসিয়ার যাত্রা শুরু হয়। সেই বিপ্লবকে সামনে রেখে ২০১৪ সালে যখন তিউনিসিয়া সংবিধান রচনা করলো সেখানে প্রিয়েম্বল এ সরাসরি বিপ্লবকে সংযুক্ত করে লেখা হলো –
‘In memory of our people’s martyrs, of the men and women who gave their lives to ensure the success of the revolution.’
বলিভিয়ার ২০০৬ সালের ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড কালচারাল বিপ্লবের পরে ২০০৯ সালের সংবিধানে লেখা হলো –
‘Bolivia is constituted as a social unitarian state of plurinational community, as a result of the democratic and cultural revolution.’
নেপালে রাজতন্ত্রের প্রবল অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আপামর জনগন তীব্র আন্দোলনের মুখে ‘প্রচলিত রাজতন্ত্রের‘ উৎখাত করে ‘People’s Movement – 1990s’ এর মাধ্যমে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের নেপালের সংবিধানে সরাসরি এই আন্দোলনকে এড্রেস করে সংবিধান লিখিত হলো এবং সরাসরি এই বিপ্লবে জনতার সংগ্রামের মাধ্যমে নতুন রিপাবলিকের উত্থানের কথা লিখিত হলো।
এহেন শত সহস্র উদাহরণ এই পৃথিবীতে রয়েছে যেখানে একটি বিপ্লবকে সংবিধানের মাধ্যমে জাস্টিফাই এবং রেটিফাই করা হয়েছে যাতে কেউ কোনোদিন জনতার বিপ্লবকে অপমান, তাচ্ছিল্য কিংবা ছোটো করার সাহস না পায়। এটাই নিয়ম। এটাই স্বাভাবিকতা।
যত দ্রুত সম্ভব জুলাই বিপ্লবকে সাংবিধানিক ভাবে বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে না এলে এরকম হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার মতো বক্তব্য হয়তো সামনে আরও শুনতে হবে।
আশা করি অতিসত্তর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা আসবে এবং সেই সঙ্গে আসবে সাংবিধানিক সংযুক্তি।
বেহাত বিপ্লবের মূল্য অনেক চড়া। জীবন দিয়ে সে মূল্য যেনো বাংলাদেশকে না দিতে হয় সেই ব্যবস্থা করা জরুরি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত