জালেমদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : জামায়াত আমির

| আপডেট :  ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৮  | প্রকাশিত :  ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৮

অতীতে যারা জুলুম করেছেন তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা এমন রাজনীতি করতে চাই না সামনে এসে আমাকে সম্মান করবে এবং পেছনে গেলে গালি দেবে। 

আমরা তেমন রাজনীতি করতে চাই সামনে আসলে আমাদের পরম দোষগুলো দেখিয়ে দেবে। এ রাজনীতি আমরা সমাজে চালু করতে পারলে সমাজের যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। তাহলে সমাজটা বদলে যাবে। আমরা কয়েকটা মন্দির পাহারা দিতে পারবো, এটা কতদিন পারব? আমরা এই সংস্কৃতির অবসান চাই। যদি মসজিদ পাহারা দিতে না হয় তাহলে মন্দির কেন পাহারায় দিতে হবে? 

বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনের সোশ্যাল গার্ডেন হলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিয়ে প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে আপনাদের কাছে আমরা ভোট চাইতে আসিনি। ভোট আপনাদের বিবেকের প্রতিধ্বনি। কাকে দিবেন না দিবেন বিবেক আপনাকে গাইড করবে। কিন্তু আমরা সুষ্ঠু সমাজের জন্য একটি হেলদি সোসাইটির জন্য আমরা সকলে মিলে মিশে কাজ করতে চাই। স্রষ্টা ছাড়া কারো করুণার পাত্র হতে চাই না। আমি যদি না চাই তাহলে আর কেউ চাক সেটা কেনো চাইবো। 

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ তো আমাদের একটি ফুলের বাগান। যদি এক যাত্রার ফুল হয় তাহলে বলে ফুল চাষ করেছে। আর যদি বিভিন্ন জাতের ফুল হয় তাহলে সেটাকে বলা হয় বাগান করেছে। এর বাগানে নতুন পেঁচায় নষ্ট করুক সেটা চাই না। কেউ এ বাগান নষ্ট করুক সেটা চাই না। এ বাগান পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। 

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানালেন জামায়াত আমির। অতীতে যারা জুলুম করেছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অমুসলিম ভাইবোনদের সম্পদ রক্ষায় মাঠে ছিল। আমরা কোনো অমুসলিমের অধিকার হরণের পক্ষে নই। এটাই ইসলামের নীতি এবং সেটিই জামায়াত অনুসরণ করে। আমরা সংখ্যালঘু মানিনা। সবাই এ দেশের নাগরিক। সবাই সমান সুযোগ পাবে। জামায়াত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা সবসময় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি এবং ৫ আগস্টের পর দেশবাসী ও বিশ্ববাসী তার প্রমাণ দেখেছে। আমরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ অনেকগুলো মন্দির ভিজিট করেছি। মূলত আমরা সারাদেশে মন্দির পাহারা দিয়েছি। এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব। যদিও একটি চক্রান্তকারী পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করেছিল। তবে আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করে যাবো ইনশআল্লাহ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, আমরা হানাহানি বিভেদ সংঘাত চাইনা। সমান অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। জামায়াতে ইসলামী এসব নিশ্চিত করবেন এটাই দাবি জানাই। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায় বলেন, জামায়াতে ইসলামী দখল করেনা। বরং যারা বলে হিন্দুদের পক্ষের দল তারা কয়টা বাড়ি দখল করেছে সেটাও দেখেন। তিনি সংসদে সংখ্যানুাতিক আসন বরাদ্দের প্রস্তাব দেন।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, আজকে স্বাধীন বাংলাদেশেও হিন্দুরা নির্যাতিত। এটা কেনো? হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কিছুটা হলেও হীনমন্যতায় ভোগেন। জামায়াতে ইসলামী হলো জনগণের খেদমতকারী দল। যে কাজ আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা করতে পারিনি সেটা জামায়াতে ইসলামী করছেন। তারা ভোট বা ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার প্রত্যাশায় এটা করেনা। 

তিনি আরও বলেন, জামায়াতের দুই জন মন্ত্রী ছিলেন। তারা যে সৎ ও আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নজিরবিহীন। এখন আমরা জিম্মিদশা থেকে রক্ষা পেয়েছি। সেজন্য আমাদের সম্প্রদায়ের নেতারা যাতে কথা বলতে পারে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য সংরক্ষিত আসন এবং পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। জামায়াতে ইসলামীও কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের নেতাদেরকে বিচারবিভাগীয় হত্যা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের পাশে ছিলেন বলে আমরা সাহস পেয়েছিলাম। জামায়াতের আমির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন। তার বক্তব্যে আমরা সাহস পেয়েছিলাম। 

তিনি বলেন, আমরা চাই ভবিষ্যতেও জামায়াতে ইসলামী আমাদের সঙ্গে থাকবেন। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি রয়েছে। আমরা এগুলো আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখতে চাই। ২০১৮ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের ইশতেহারে ৫ দফা সংযুক্ত করা ছিল। কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করেনি। বিগত ৫৩ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর যত হামলা হয়েছে একটিরও আমরা বিচার পাইনি। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, এজন্য আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। 

৫ আগস্টের পর আমাদের বিভিন্ন মন্দিরে ও অনেকের বাড়িতে হামলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো তো কোন মুসলমান করেনি, মাদরাসার প্রিন্সিপাল করেনি। কারা হামলা করেছেন সকলে জানেন। আমরা তাদের বিচার চাই। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই। জামায়াতে ইসলামী কোনো বৈষম্য রাখবেনা বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তবে আজকেও সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়না। পুলিশের অনেকের চাকরি গেছে। আমরা নিরাপত্তা চাই। কেননা আমরা বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে এদেশেই মরতে চাই।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের অনুপম বড়ুয়া বলেন, জামায়াত আমীর যে বক্তব্য রাখেন সেটি দেশকে জাগ্রত করে নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়।

সিদ্ধেশ্বরী সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ও পুলিশের সাবেক ডিআইজি নির্বাক চন্দ্র মাঝি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শাসনের পর একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অভয় দেওয়ার কারণে আমরা নিরাপদে বাংলাদেশে বসবাস করতে পেরেছি। ৫ আগস্টের পর পর জামায়াতের আমির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সারাবিশ্বের মানুষ দেখেছেন। জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি করেনা। তারা নেশাখোরও না। এসব কথা বলার কারণে আমার পদোন্নতি হয়নি। এগুলো গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রিপোর্ট করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নেতা লিটন কুমার বড়ুয়া, ব্যাপ্টিস্ট চার্চের বাস্তুর তপন রায়, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের স্বরুপানন্দ ভিক্ষু, শুভাশিস, পল্টন দাস প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত