‘বৈষম্য-বিভাজন-দুর্নীতি দূর করার হাতিয়ার কোরবানি’
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী মুসলমান এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারকবাদ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী।
বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, ঈদুল আজহা আমাদের ত্যাগ, আনুগত্য, তাকওয়া এবং খাঁটি ইমানের অমূল্য শিক্ষা দেয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং ইসমাঈল (আ.)-এর কোরবানির ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য বজায় রাখার মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। আজ আমাদের সমাজে এই ত্যাগ ও কুরবানির চেতনা দুর্নীতি, বিভাজন, সামাজিক বৈষম্য এবং বিভ্রান্তির অন্ধকার দূর করার এক কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে ইসলামী সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের ওপর একের পর এক আঘাত আমাদেরকে গভীরভাবে ব্যথিত করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় প্রতীকে ইসলামী চেতনার অনুপস্থিতি দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর এহেন আঘাত কেবল জনমনে ব্যথা তৈরি করে ক্ষান্ত হবে না, বরং তা জাতীয় ঐক্যের ভিতকে দুর্বল করে দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
খতমে নবুওয়াতের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এখানে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও প্রতীকে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকা সাংবিধানিক, ঐতিহাসিক এবং বাস্তবিকভাবে অত্যন্ত জরুরি। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ষড়যন্ত্রমূলক কোনো অপতৎপরতার নীল নকশা বা উদ্যোগকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের কাছে জোরালো আহ্বান জানাই—জাতীয় ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বার্থে জাতীয় মুদ্রা ‘টাকা’ থেকে বিতর্কিত ডিজাইন বাতিল করে ইসলামী চেতনা সম্মান জানিয়ে নতুন নকশা দ্রুত প্রণয়ন করা হোক। একই সঙ্গে দেশের সকল ইসলামপ্রিয় দল, সংগঠন, সুধী সমাজ এবং সকল নাগরিকসহ আপামর তৌহিদী জনতাকে ইসলামের মৌলিক চেতনা রক্ষায় সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
মাওলানা রাব্বানী ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের মাজলুম মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা-এর মাহাত্ম্যকে সামনে রেখে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের মাজলুম মুসলমানদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের পাশে এগিয়ে আসা প্রত্যেক মুসলিম শাসকের ঈমানী দায়িত্ব। একই সাথে তা নৈতিক ও মানবিক কর্তব্য। আমরা ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়া, মিয়ানমার, উইঘুরসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে নিগৃহীত, নিপীড়িত, নির্যাতিত এবং বাস্তুচ্যুত মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সমর্থন অপরিহার্যভাবে সর্বদা অব্যাহত রাখবো, ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এসব অত্যাচারিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন।
তিনি ঈদের এই পবিত্র সময়ে সমাজের গরিব, দুঃখী এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামর্থ্যবান সকলের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে বলেন, কুরবানি তখনই প্রকৃত পূর্ণতা পায়, যখন তার আনন্দ সমাজের সকল শ্রেণির পেশাজীবী এবং সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ভাগ করে নেওয়া যায়। তাই আমাদের জন্য এই ঈদ দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এক সুবর্ণ সুযোগ হয়ে আসুক।
পরিশেষে তিনি মহান আল্লাহর দরবারে দেশ, জাতি এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সমূহ কল্যাণ এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই ঈদ হবে জাতীয় ঐক্য, ধর্মীয় জাগরণ এবং ইমানি দৃঢ়তার এক নতুন দিগন্তের সূচনা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত