আনন্দ-বিনোদন সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

| আপডেট :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০  | প্রকাশিত :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০

মানুষের শরীরের জন্য যেমন বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ও ভিটামিন প্রয়োজন, তেমনি তার আত্মার জন্য দরকার বিনোদন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, চিত্তবিনোদন, হাসিখুশি ও প্রফুল্লতা বিভিন্ন ধরনের রোগ-প্রতিরোধ করে এবং শরীরে নানা ধরনের ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়াকেও ঠেকিয়ে রাখে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে হাসি ও প্রফুল্লতা এমন এক অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়া, যার ফলে মুখের ১৫টি মাংসপেশি একই সময়ে সংকুচিত হয় এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ঘটে। তাই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও আনন্দ ও চিত্তবিনোদনকে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেও শরীরচর্চার অংশ হিসেবে কুস্তি, ব্যায়াম ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করতেন এবং সাহাবিদেরও উৎসাহ দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদিনায় একবার কিছু কৃষ্ণাঙ্গ যুবক বর্শা নিয়ে খেলছিল। তা দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের বললেন, ‘খেলতে থাকো।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘বনি আরফিদার বাসিন্দারা! তোমরা খেলাধুলা গ্রহণ করো। যেন ইহুদি-খ্রিষ্টানরা জানতে পারে যে, আমাদের ধর্মেও বিনোদন আছে।’ (বোখারি: ৯৫০)

শরীরচর্চা ও খেলাধুলা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রণ-নৈপুণ্যের প্রয়োজনে তীর নিক্ষেপ, বর্শা চালনা, দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদিকে ইসলাম সমর্থন করে। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ কিংবা উটের প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য প্রতিযোগিতা নেই।’ (তিরমিজি: ৫৬৪)। অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা, এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা।’ (ফিকহুস সুন্নাহ: ২/৬০)। ইসলাম নির্দিষ্ট কোনো খেলাধুলাকে জায়েজ বা নাজায়েজ বলেনি; বরং তিনটি শর্তের সঙ্গে জায়েজ-নাজায়েজের সম্পর্ক। তা হলো—১. ইসলামী শরিয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন না হওয়া। ২. শারীরিক উপকার ও কল্যাণ অর্জন। ৩. আর্থিক ক্ষতিসাধন না হওয়া। এ তিনটি শর্ত যে খেলার মধ্যে পাওয়া যাবে তা জায়েজ, অন্যথায় নাজায়েজ হবে।

বিনোদনের জন্য ইসলামী গান, যা কোনো বেগানা মহিলার কণ্ঠে পরিবেশিত হয় না এবং যাতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় না, সেগুলো শ্রবণ বৈধ। অন্যদিকে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গাওয়া গান শোনা এবং নর্তকীর নাচ উপভোগ করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘একশ্রেণির লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে (আল্লাহর পথ) নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লোকমান: ৬)। এ আয়াতে ‘অবান্তর কথাবর্তা’ বলতে গানবাজনা, বাজে উপন্যাস, অশ্লীল কথাবার্তা বোঝানো হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই উম্মত ভূমিধস, উৎক্ষেপণ ও বিকৃতি সাধন হবে, যখন তারা মদপান করবে, গায়িকা দ্বারা গানের আয়োজন করবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে।’ (রুহল মাআনি: ৭/৭৬)

সুস্থ বিনোদন বা নিষ্কলুষ আমোদ-প্রমোদের জন্য সফর করা অন্যতম এক মাধ্যম। ভ্রমণের ফলে মানুষের মনে জমে থাকা অবসাদ, একঘেয়েমি ও ক্লান্তি দূর হয় এবং মন সতেজ ও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। ভ্রমণ মানুষের শরীরকেও সুস্থ রাখে। তা ছাড়া ভ্রমণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও আল্লাহর নেয়ামত উপলব্ধি করে আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি। হজরত ইয়াকুব (আ.) তার পুত্র ইউসুফ (আ.)-কে বিনোদনের জন্য তার ভাইদের সঙ্গে সফরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্মৃতিময় স্থান ভ্রমণ ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো মিথ্যাবাদীদের পরিণতি কেমন।’ (সুরা আনয়াম: ১১)। মানুষের জীবনে সুস্থ বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা শরীরে সজীবতা আসে, প্রাণে চাঞ্চল্য আনে এবং ইবাদতে উদ্যম তৈরি করে। তবে অবশ্যই নিয়ত ঠিক থাকতে হবে এবং ইসলামের নীতি বজায় রাখতে হবে। তাহলেই কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ হবে।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত