কমিক বইয়ে ‘ভয়ংকর পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী’, জাপানজুড়ে আতঙ্ক
কমিক বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘ভয়ংকর পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী। এ ঘটনায় জাপানজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একের পর এক পর্যটকরা দেশটিতে আসা ছেড়ে দিয়েছেন।
শনিবার (০৫ জুলাই) দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানে একটি পুরনো কমিক বইয়ের ‘দুর্যোগের ভবিষ্যদ্বাণী’কে ঘিরে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, আজ ৫ জুলাই জাপানে এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও সুনামি আঘাত হানবে। আর এই আতঙ্কে পর্যটকরা দেশ ছাড়ছেন, এমনকি বিভিন্ন ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ‘দ্য ফিউচার আই সো’ নামের একটি মাঙ্গা (জাপানি কমিক) বই। এটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। বইটির লেখক রিও তাতসুকি দাবি করেছিলেন, স্বপ্নে তিনি দেখেছেন ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ভয়াবহ একটি সুনামি ও ভূমিকম্প জাপান এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে কাঁপিয়ে দেবে। মাঙ্গায় বলা হয়েছে, সুনামিটি স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ শক্তিশালী হবে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তাতসুকির আরেকটি স্বপ্নে দেখা ভবিষ্যদ্বাণী ২০১১ সালের মরণঘাতী ভূমিকম্প ও সুনামির সঙ্গেও মিলে গিয়েছিল। ফলে নতুন এই ভবিষ্যদ্বাণীকে ঘিরে আতঙ্ক বেড়েছে। জাপান ছাড়াও অনেক পর্যটক বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
তবে লেখক তাতসুকি নিজে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আমি কোনোভাবেই ভবিষ্যদ্রষ্টা নই। এটি নিছকই একটি কমিক বই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জাপানে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক এসেছিলেন। কিন্তু মে মাস থেকে হঠাৎ পর্যটন হ্রাস পেয়েছে। হংকংভিত্তিক একটি ট্রাভেল এজেন্সির নির্বাহী স্টিভ হুয়েন বলেন, গুজবের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, ডিসকাউন্ট এবং ভূমিকম্প বীমার প্রবর্তন জাপানগামী ভ্রমণকে একেবারে শূন্যে নামতে বাধা দিয়েছে। এমনকি তার এজেন্সি জাপানের জন্য বুকিং-এ ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টের অফার দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিড়ম্বনার বিষয়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও ‘দ্য ফিউচার আই স’ মাঙ্গার বিক্রি এক মিলিয়ন কপি ছাড়িয়েছে এবং এটি এখন টোকিওর বইয়ের দোকানগুলোতে প্রধান প্রদর্শনীতে রয়েছে। টোকিওর একটি দোকানে বইটির পাশে একটি সতর্কতা সাইন রয়েছে, যাতে লেখা: আপনি এটি বিশ্বাস করবেন কি না, তা আপনার ওপর নির্ভর।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতি নিয়ে মতামত দিয়েছেন।তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্পবিদ প্রফেসর রবার্ট গেলার বলেন, তিনি ১৯৭০-এর দশক থেকে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করছেন এবং তার অভিজ্ঞতায় কোনো অতীন্দ্রিয় বা বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী কখনো নির্ভরযোগ্য হয়নি। তিনি বলেন, আমার বৈজ্ঞানিক জীবনে যত ভবিষ্যদ্বাণী দেখেছি, তার কোনোটিই সঠিক ছিল না।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত