ইসরায়েলের পাঁচ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান
ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। নতুন এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলের পাঁচ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এর মধ্যে একটি প্রধান বিমান ঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি লজিস্টিক ঘাঁটি রয়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পাঁচটি ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হেনেছে। রাডার তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তবে ইসরায়েলের কঠোর সামরিক সেন্সরশিপ আইনের কারণে এই হামলার বিষয়টি দেশটির অভ্যন্তরে প্রকাশ করা হয়নি।
দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। এর মধ্যে রয়েছে একটি প্রধান বিমান ঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি লজিস্টিক ঘাঁটি। এই হামলাগুলো ছাড়াও ইরানের ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বেসামরিক ও শিল্প অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। তবে একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সব সংশ্লিষ্ট ইউনিট পুরো অভিযান জুড়ে কার্যকরী ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ইরানের হামলায় দেশটিতে ১৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তাদের হোটেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
দ্য টেলিগ্রাফের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুদ্ধের প্রথম আট দিনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর কারণ হতে পারে ইসরায়েলের সীমিত ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত এবং ইরানের উন্নত কৌশল ও সম্ভাব্য অধিকতর পরিশীলিত ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং এবং অ্যারো সিস্টেম রয়েছে। এগুলো যথাক্রমে স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার হুমকি মোকাবিলায় কাজ করে। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং লোহিত সাগরে মোতায়েন মার্কিন নৌবাহিনীর ইন্টারসেপ্টরগুলো এই যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে। এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৬টি থাড ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করেছে, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার।
ইরানের দাবি, তারা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন একসঙ্গে ব্যবহার করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করেছে। একজন ইরানি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আত্মঘাতী ড্রোনগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যস্ত রাখা।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের উপ-প্রধান মেজর জেনারেল আলি ফাজলি বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করেন, ইসলামী বিপ্লবের ৪৭ বছরের ইতিহাসে আমরা এখন সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির অবস্থানে রয়েছি। ইরানের ভূগর্ভস্থ ‘ক্ষেপণাস্ত্র শহরগুলো’ অক্ষত রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানের প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারের মধ্যে ২০০টিরও বেশি ধ্বংস করা হয়েছে। এগুলো তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ইরানের যুদ্ধ-পূর্ব ক্ষেপণাস্ত্র মজুত ছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০। তবে, তারা দ্রুত বড় আকারে উৎপাদনের দিকে এগোচ্ছিল, যা আগামী কয়েক বছরে তাদের মজুত ৮ হাজার থেকে ২০ হাজারে উন্নীত করতে পারত।
ইসরায়েলে এই হামলার কারণে জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে। দেশটির বিখ্যাত সাংবাদিক রাভিভ ড্রাকার বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সামরিক ঘাঁটি ও কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত করেছে, যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এটি জনগণের মধ্যে ইরানের হামলার নির্ভুলতা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে অজ্ঞতা সৃষ্টি করেছে।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরি শের জানিয়েছেন, তারা ইসরায়েল ও ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করছেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবেন। তিনি বলেন, রাডার তথ্য পরিবেশে পরিবর্তন শনাক্ত করে বিস্ফোরণ চিহ্নিত করে, তবে চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণের জন্য স্থল প্রতিবেদন বা স্যাটেলাইট চিত্র প্রয়োজন।
ইরানে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করা ক্ষেপণাস্ত্রের ফুটেজ ব্যবহার করে দেশবাসীকে যুদ্ধে বিজয়ের দাবি প্রচার করছে। আয়রন ডোমকে উপহাস করে কার্টুন এবং বিপ্লবী গানের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
এই যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রায় ১,২০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে সামাজিকমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি দাবি করেছেন, ইরান এই যুদ্ধে ‘বিজয়’ অর্জন করেছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত