ডেঙ্গুতে বরগুনায় থামছে না মৃত্যুর মিছিল
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ জন। সর্বশেষ শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে রাইছা নামে ১১ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে বামনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহমান মল্লিকের মেয়ে।
বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩ হাজার ৩৫৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে স্থানীয় জনসাধারণ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে।
জানা গেছে, রাইছাকে কয়েক দিন আগে স্থানীয় এক চিকিৎসক ডা. এনামুল হক তুহিনের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন এবং সিবিসি পরীক্ষা করা হলে ডেঙ্গু নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। তবে রিপোর্টে তার প্লাটিলেট স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ছিল বলে জানান চিকিৎসক।
বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, রাইছার শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ ছিল। পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও অনেক সময় রিপোর্টের বাইরে গিয়েও উপসর্গ দিয়ে রোগ নির্ণয় করতে হয়। তার প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাচ্ছিল, যা ডেঙ্গুর একটি সাধারণ এবং মারাত্মক লক্ষণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, উন্নত চিকিৎসা পাবার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করা ২৯ জনের মধ্যে ছয়জন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। বাকিরা বরিশাল ও অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অথবা হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বরগুনায় সচেতনতার অভাব, সময়মতো রোগ নির্ণয়ের ঘাটতি এবং চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধতা ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এদিকে শিশু রাইছার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বামনা উপজেলা, বরগুনা জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী। তারা এক বিবৃতিতে বলেন, শিশু রাইছার এ অকাল মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য এক চরম বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা সরকারের কাছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।
বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। তবে সময়মতো পরীক্ষা, সঠিক তথ্য ও দ্রুত চিকিৎসা না হলে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা জোরদারে কাজ চলছে। বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং জরুরি ওয়ার্ডে আলাদা শয্যা বাড়ানোর কাজ করছে তারা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত