শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিও চিন্তা করে যুক্তি দিয়ে

| আপডেট :  ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৮  | প্রকাশিত :  ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৮

আমরা অনেক সময়ই মানুষকে ‘যুক্তিবাদী প্রাণী’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকি। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন এক তথ্য, যা প্রচলিত এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে নিঃসন্দেহে। গবেষকরা বলছেন-  শুধু মানুষই নয়, পশুপাখিরাও যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারে। যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সমস্যা সমাধান করা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আচরণ পরিবর্তনের সক্ষমতা রয়েছে অনেক প্রাণীর মধ্যেই।

সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি প্রাণীবিজ্ঞান গবেষণা দল পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপর একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা পরিচালনা করে। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পশুপাখিরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা কেবল ‘ইনস্টিংক্ট’ বা সহজাত প্রবৃত্তির কারণে নয়, বরং চিন্তাভাবনা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে নেওয়া হয়েছে।

যেমন, ইউরোপীয় শিকারি পাখি ‘নিউ ক্যালেডোনিয়ান কাক’ নিয়ে করা পরীক্ষায় দেখা যায়, তারা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে খাদ্য সংগ্রহে সক্ষম। এমনকি তারা কোনো সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন উপায় যাচাই করে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি বেছে নেয়। এটা সরাসরি ‘কারণ ও ফলাফল’ বোঝার সক্ষমতাকে নির্দেশ করে।

‘যুক্তিবোধ’ কেবল মানুষের সম্পত্তি নয়

গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তিবোধ বা ‘লজিক্যাল থিংকিং’ এখন আর কেবল মানুষের একচেটিয়া সম্পদ বলে বিবেচিত হতে পারে না। শিম্পাঞ্জি, ডলফিন, এমনকি কিছু মাছও পরিস্থিতি বুঝে ভিন্ন আচরণ করে। যেমন, অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে অক্টোপাস নিজের আশ্রয় গঠনের জন্য নারকেলের খোলস সংগ্রহ করে রাখে এবং সেটা ভবিষ্যতে ব্যবহার করে। এটি পরিকল্পিত চিন্তার এক নিদর্শন।

মস্তিষ্কের গঠন ও বুদ্ধিমত্তা

গবেষকদের মতে, প্রাণীদের যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার পেছনে মূল কারণ তাদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট গঠন ও নিউরোনের জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। যদিও মানুষের মস্তিষ্ক বড় এবং জটিল, তবে অনেক পাখির (যেমন কাক বা তোতা পাখি) নিউরাল কাঠামো অত্যন্ত উন্নত এবং তারা মানুষের মতোই কিছু কিছু চিন্তা করতে পারে।

ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি

এই গবেষণা পশুপাখির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ও আচরণে একটি মৌলিক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। যদি পশুপাখিরাও যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারে, তবে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও অধিকারের চিন্তাও নতুনভাবে ভাবতে হবে। পশু অধিকার, পশুপ্রেম ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়গুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এই গবেষণা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায় প্রাণীজগৎ সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি কত সীমাবদ্ধ ছিল। যুক্তি, চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতির আরও অনেক সৃষ্টির মধ্যেও বিদ্যমান। পশুপাখির বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তিবোধকে সম্মান করেই আমাদের ভবিষ্যতের বিজ্ঞান, নীতিনির্ধারণ ও মানবিক আচরণ গড়ে তোলা উচিত।

সূত্র : জার্নাল অব কম্পারেটিভ সাইকোলজি (২০২৫) 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত