রাফাল নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের বিস্ফোরক মন্তব্য

| আপডেট :  ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:২৮  | প্রকাশিত :  ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:২৮

ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্রিয়ভাবে ষড়যন্ত্র করছে চীন। এমন অভিযোগই তুলেছেন ফরাসি সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাফালের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতে সমন্বিত বিভ্রান্তিকর প্রচার অভিযান চালানো হচ্ছে এবং এর পেছনে রয়েছে চীন ও পাকিস্তান। খবর আলজাজিরার।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০২৫ সালের মে মাসে চার দিনের তীব্র সীমান্ত সংঘর্ষ হয়। এতে দুপক্ষের বহু যুদ্ধবিমান আকাশযুদ্ধেও অংশ নেয়। ওই সময় পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল রাফাল।

ফরাসি সামরিক সূত্র বলছে, তাদের প্রাপ্ত তথ্যে ভারত তিনটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। একটি রাফাল, একটি রুশ নির্মিত সুখোই এবং একটি পুরোনো মিরাজ ২০০০। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

এ ঘটনাটি রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রথম বড় ক্ষয়ক্ষতির রেকর্ড। এতে রাফালের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ফ্রান্স।

ফেক নিউজ ও ডিজিটাল প্রচারণা যুদ্ধ

ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, সংঘর্ষের পরই শুরু হয় রাফালবিরোধী প্রচারণা। তারা বলছেন, চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে: 

– সোশ্যাল মিডিয়ায় রাফালবিরোধী পোস্ট ভাইরাল করে
– এআই-নির্মিত ভুয়া ভিডিও প্রকাশ করে
– ভিডিও গেমের দৃশ্য ব্যবহার করে বাস্তব যুদ্ধের ভুয়া ফুটেজ ছড়ায়
– ধ্বংস হওয়া রাফালের ভুয়া ছবি প্রকাশ করে

ফরাসি গোয়েন্দাদের দাবি, সংঘর্ষ শুরুর পর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই এক হাজারের বেশি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়, যেগুলোর মাধ্যমে চীনের যুদ্ধবিমানকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরা হয় এবং রাফালকে অকার্যকর হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা চলে।

চীনা দূতাবাসের ভূমিকা

ফরাসি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন দেশের চীনা দূতাবাস এই প্রচারণায় সরাসরি জড়িত। চীনের সামরিক অ্যাটাশেরা স্থানীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাফালের দুর্বলতা তুলে ধরেন এবং তাদের চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান কেনার পরামর্শ দেন।

বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, যারা এরই মধ্যে ৪২টি রাফাল অর্ডার করেছে এবং আরও কেনার চিন্তাভাবনা করছে—তারা এই প্রচারণার প্রধান লক্ষ্যবস্তু বলে জানিয়েছেন এক ফরাসি সামরিক কর্মকর্তা।

ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাফালের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালানো হয়েছে, যার উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের মনোভাব প্রভাবিত করা এবং চীনা যুদ্ধবিমানকে বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা।

তারা আরও জানায়, রাফাল একটি বিশ্বমানের যুদ্ধবিমান। এটি আধুনিক প্রযুক্তি ও বহু অপারেশনে সফলতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

অপরদিকে, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ফ্রান্সের এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীন সবসময় দায়িত্বশীলভাবে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করে এবং বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। 

রাফাল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৫৩৩টি রাফাল বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ৩২৩টি গেছে বিভিন্ন বিদেশি গ্রাহকের কাছে— মিশর, ভারত, কাতার, গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সার্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাফালের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক ছড়ালেও, এর প্রযুক্তিগত দিক ও যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা অনেক দেশকেই এখনো আকৃষ্ট করছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত