টেকনাফে বৃষ্টি-পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষ
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভারি বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ৮০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সঙ্গে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।
স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক ব্লকে পানি বেড়ে গিয়ে প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন হাজার রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পানিবন্দি শতাধিক বসতি। পাহাড় ধস, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সহায়তাসহ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা লোকজনদের দৈনিক তিনবেলা খাবার দিচ্ছে প্রশাসন।
তারা আরও জানান, টানা সপ্তাহজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। সে সঙ্গে পাহাড়ধসে ৭টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা বসবাসকারীদের খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন।
সাবরাংয়ের বাসিন্দা মুফিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামের সঙ্গে সাগর। ভারি বৃষ্টিপাতে ও জোয়ারের পানি ঢুকলে দ্রুত পানি সরে যেতে পারে না। গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি ছিলাম। তবে কিছু কিছু ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছি। আমাদের গ্রামে কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্যাম্প-২৬ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, সারাদিন বৃষ্টি, একটুও কমেনি। আজ ক্যাম্পে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হননি।
উনচিপ্রাং ২২ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (নেতা) মো. রফিক বলেন, সপ্তাহজুড়ে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ক্যাম্প থেকে পানি দ্রুত সরে যেতে পারিনি। এ কারণে ক্যাম্পের বেশিরভাগ ব্লকে পানি বেড়ে গেছে।
রোহিঙ্গা নেতা মো. নবী হোসেন বলেন, ক্যাম্পে পানি ঢুকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। যারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি জায়গা আছেন, তাদেরকেও বারবার সরে যেতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর রাখছি।
শরণার্থী কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধস হয়েছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। টানা বৃষ্টিতে একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানি উঠেছে। কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি। অনেকেই লার্নিং সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন।
টেকনাফ মায়মুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়ে থাকা রোজিনা আক্তার বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে সরে এ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজেদের ঘরে চলে যাব।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে হোয়াইক্যং লম্বাবিলে পাহাড় ধসে সাতটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনার খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা ও নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। যেসব গ্রামে পানিবন্দি মানুষ, তাদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের চার-পাঁচটি গ্রামের পানিবন্দি ৩০০-৪০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তায় দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পানি আস্তে আস্তে নেমে নদীতে চলে যাচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, টানা ভারি বৃষ্টিপাতে টেকনাফ উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া শুরু করেছি। আর সেন্টমার্টিনে চাল পাঠানোর জন্য মঙ্গলবার সকালে ট্রলার ভর্তি চাল তোলা হয়েছে। চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে চাল নিয়ে যেতে। সাগরের আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখে চাল দ্বীপে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ভারি বৃষ্টি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এখন কিছু কিছু গ্রামে পানি নামতে শুরু করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত