বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী সাক্ষাতের বিধান

| আপডেট :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০  | প্রকাশিত :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০

বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন ও ইসলামী বিধান। পবিত্র জীবনযাপনের জন্য বিয়ে অপরিহার্য। বিয়ের আগের বর-কনেকে দেখার নিয়ম রয়েছে। বিয়ের জন্য কনেকে কতটুকু দেখা যাবে—এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো ফকিহরা এ বিষয়ে একমত, যে ব্যক্তি কোনো নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেখতে চায়, তার জন্য তা অনুমোদিত। ইমাম ইবনে কুদামাহ বলেছেন, নারীকে দেখার অনুমোদনের বিষয়ে আহলুল ইলমদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ে করতে চায়, যদি সম্ভব হয় তবে সে যেন তার প্রতি এমনভাবে তাকায়, যা তাকে বিয়ের প্রতি আগ্রহী করবে। জাবির (রা.) আরও বলেন, আমি একজন নারীকে প্রস্তাব দিই এবং তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকি, অবশেষে তার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয় এবং আমি তাকে বিয়ে করি। (আবু দাউদ, আহমদ)

পাত্রীকে কতটুকু দেখা বৈধ এ ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। মালিকি, শাফিয়ি, হানাফি মাজাহাবে এবং ইমাম আহমদের একটি বর্ণনামতে, পাত্রীর শুধু মুখমণ্ডল ও হাত দেখা বৈধ। তবে হানাফি মাজহাবের একটি বর্ণনা অনুযায়ী পা-ও দেখার অনুমতি রয়েছে। হান্বলি মাজহাবের মতে, পাত্রীকে তার মুখমণ্ডল, ঘাড়, হাত ও পা দেখার অনুমতি রয়েছে। এটি তাদের সাধারণত কাজকর্মে প্রকাশিত অঙ্গ। তবে ইমাম আহমদের আরেকটি বর্ণনায় কেবল মুখ দেখার অনুমতি উল্লেখ আছে। ইমাম আওজাঈ বলেছেন, পাত্রীকে তার শরীরের মাংসের অংশও পর্যন্ত দেখার অনুমতি রয়েছে। ইমাম ইবনে হাজমের (জাহিরি মাজহাব) মতে, পাত্রীকে তার সতরের অন্তর্ভুক্ত থাকা অংশ ব্যতীত পুরো শরীর দেখা বৈধ। ইবনে হাজম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেখতে চায়, সে গোপনে বা প্রকাশ্যে তার শরীরের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অংশ দেখতে পারে। (আল-মুহাল্লা : ১১/২১৯)

সাধারণত আলেমদের মতে, পাত্রীর মুখমণ্ডল ও হাত দেখাই যথেষ্ট। কারণ মুখ সৌন্দর্যের মূল উৎস এবং হাতে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা বোঝা যায়। সুতরাং বিয়ে করতে ইচ্ছুক পাত্রের জন্য পাত্রীর শুধু চেহারা এবং দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও দুই পা টাখনুগিরা পর্যন্ত দেখা জায়েজ। এ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ, এমনকি হাতের কবজি থেকে ওপরের অংশ এবং পায়ের গিরার ওপরের অংশ দেখাও নাজায়েজ। আর পাত্রীর হাত বা কোনো অঙ্গ স্পর্শ করাও জায়েজ নয়। তাই পাত্রের জন্য পাত্রীকে আংটি পরিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে না। আংটি পরিয়ে দিতে চাইলে পাত্রপক্ষের মেয়েদের কেউ গিয়ে পরিয়ে দিতে পারে। অথবা পাশে পাত্রীর মাহরাম যারা থাকে, তাদের কাছে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। (তাবয়িনুল হাকায়েক : ৭/৪০; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/৩০১; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৭০)।

লেখক: ইমাম ও খতিব

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত