নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান

| আপডেট :  ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২২  | প্রকাশিত :  ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২২

নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে উৎপাদনশীলতা, কর্মীদের কল্যাণ এবং পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পোশাক খাতে সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড মেনে চলা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ সার্বিকভাবে নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।  এ লক্ষ্যে তৈরি পোশাক খাতে নারীর টেকসই ভবিষ্যৎ তৈরিতে এক সাথে কাজ করবে ইউএসএআইডি, পিভিএইচ এবং কেয়ার বাংলাদেশ। 

সোমবার (২৮ অক্টোবর) হোটেল রেডিসন ব্লুতে ইউএসএআইডি’স উইমেন থ্রাইভ ইন বাংলাদেশ প্রকল্প আয়োজিত ‘তৈরি পোশাক খাতে নারীদের টেকসই ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।

বক্তারা বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে, রপ্তানি আয়ের শীর্ষ পোশাক খাতে নারী শ্রমিকদের জন্য সহায়ক কাজের পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খাতটি নারীর কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এক সময় এ সেক্টরে কর্মরতদের সিংহ ভাগই ছিল নারী, কিন্তু কম মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাপ, স্বয়ংক্রিয়  যন্ত্রপাতি চালানোর দক্ষতার ঘাটতি, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও নিপীড়ন, সন্তান লালনপালন, গৃহস্থালির কাজের চাপ সামলাতে গিয়ে তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমছে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বিভিন্ন সমীক্ষার বরাত দিয়ে সভায় আলোচকরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ তৈরি পোশাক খাতে নারী কর্মীদের হার ৫৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে প্রভাবিত করছে।

তা ছাড়া এ খাতে অটোমেশন নারীদের চাকরির সুযোগ হ্রাস এবং লিঙ্গবৈষম্য তৈরি করছে।  এ খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে সরকার, গার্মেন্টস মালিক, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, ট্রেড ইউনিয়ন এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় ভূমিকার উপর জোর দেওয়া হয়।

কেয়ার এশিয়া অঞ্চলের প্রধান রমেশ সিং-এর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ইউএসএআইডির ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স অফিসের উপপরিচালক ব্লেয়ার কিং। ইউএসএআইডিস উইমেন থ্রাইভ ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের চিফ অব পার্টি আমানুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পিভিএইচ করপোরেশনের করপোরেট রেসপন্সিবিলিটি ম্যানেজার বুশরা বিনতে বাতেন, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এসএম এনামুল হক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মতিউর রহমান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ইউএসএআইডির লেবার অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস্ কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ইমেলদা মল্লিক, কেয়ার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর-প্রোগ্রাম, মোহাম্মদ মেহরুল ইসলাম, দেশ গ্রুপ অব কোম্পানিজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদ্যা অমৃত খান, শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ এবং বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম। 

অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন পিভিএইচ সাপ্লাই চেইন ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্র্যান্ড, নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। আলোচনা সভায় পোশাক খাতে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে নারী উন্নয়ন নীতি, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল, জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিসহ সংশ্লিষ্ট নীতি কাঠামোতে নারীদের অধিকার এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার বিরুদ্ধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থন, কর্মক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নারী কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখ্য, কেয়ার বাংলাদেশ বাস্তবায়িত, ইউএসএআইডিস উইমেন থ্রাইভ ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের লক্ষ্য পিভিএইচ করপোরেশনের সাপ্লাই চেইন কারখানা এবং কমিউনিটি পর্যায়ে নারী তৈরি পোশাক কর্মীদের জন্য পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন এবং নেতৃত্বের বিকাশে ২০২৬ সালের মধ্যে ১ লাখের অধিক নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত