মন ছুঁয়েছে ‘নিহত গোলাপ’
হেমন্তের মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের সামনের গ্যালারিতে তিলধারণের ঠাঁই নেই। ইট-পাথরের কংক্রিটে ভরা মিথ্যা কথার এই যান্ত্রিক নগরীতে তাই নির্মল আনন্দের আশায় যাত্রাপালার আসরে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছেন।
বহু দর্শকের উপস্থিতিতে যাত্রা উৎসবের প্রথম দিন প্রদর্শিত হয় সুরুভী অপেরার নাটক ‘নিহত গোলাপ’। পালা নির্দেশনায় ছিলেন কবির খান।
মূলত গণঅভ্যুত্থান উত্তর সময়ে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয় ‘যাত্রা উৎসব ২০২৪’। এবার শিল্পকলা একাডেমি নিজস্ব অঙ্গনের বাইরে খোলা চত্বরে যাত্রা উৎসব করছে। ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী এ উৎসব। এদিন অনেকেই যাত্রা দেখতে এসেছেন জীবনে প্রথমবার। ‘নিহত গোলাপ’ দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। শিল্পকলার ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ছুটির দিন বিকেল থেকে আস্তে আস্তে দর্শক ভিড় বাড়তে থাকে মুক্তমঞ্চে। এর মাঝে কেউ কেউ এসেছিলেন যাত্রাপালার সোনালি দিনের স্মৃতি ফিরে পেতে, আবার কেউবা এসেছিলেন প্রথমবার যাত্রা দেখতে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র থেকে শ্রমিক, হকার সব পেশার মানুষ যেন একসঙ্গে মিশে গেছেন মুক্তমঞ্চে।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রিকশাচালক ইসরাফিল মজুমদার। বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট যাত্রা শিল্পী অনিমা দে। স্বাগত বক্তব্য দেন নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি মহাপরিচালক, নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে শুরুতেই জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ চমকের মতো দ্রুতবেগে ঘটে যাওয়া এক নির্ভয় অভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ ছিঁড়ে জন্ম নিয়েছে নতুন এই বাংলাদেশ।’ সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘জাতীয় বাজেট যেখানে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার সেখানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ কেবল ৭৭৮ কোটি টাকা। সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো সময়ের দাবি।’
তিনি আরও বলেন ‘শিল্পকলা একাডেমি মনে করে, শিল্পচর্চা জনজীবনের কেন্দ্রে অবস্থিত। শিল্পচর্চার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এবং গ্রামীণ জনসাধারণের বিনোদনের ঐতিহ্য বিবেচনায় আমরা এই যাত্রাপালার আয়োজন করেছি। আমরা চাই, আপনারা সবাই যাত্রা শিল্পীদের পাশে থাকুন।’
ফয়েজ জহির বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় এ উৎসব আমরা সারা দেশে যেন ছড়িয়ে দিতে পারি। যাত্রাশিল্পসহ শিল্পকলার সব মাধ্যমকে প্রবাহিতভাবে বেগবান করার সময় এসেছে।’
উদ্বোধনী আলোচনার পর শুরু হয় প্রথম দিনের যাত্রাপালা ‘নিহত গোলাপ’। এর কাহিনীর প্রধান চরিত্র মাধবপুর জমিদারের চক্রান্তের শিকার রাধারানী কলেজের ছাত্র গোকুল। জমিদারের আত্মীয়কে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করানোর কারণে গোকুলের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। গোকুলকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয় ‘নিচু জাতের’ ছেলে বলে। পরবর্তীতে সে সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে ভাগ্যের ফেরে তার প্রেমিকা যৌন পল্লিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। কোন একদিন গোকুল ছিনতাইয়ের অপরাধে ওই পল্লীতে আশ্রয় নেয়। অবশেষে একদিন সে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিচারে তার সাজা হয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত