‘কে এসে বলবে, দেখো মা আমি পাস করেছি’
যশোর সরকারি সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে শায়ন্ত মেহতাব প্রিয় এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৪ দশমিক ১০। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট বিকেলে যশোর শহরে বিজয় মিছিলে বের হয়ে জাবির হোটেল ট্র্যাজেডিতে পুড়ে অঙ্গার হন তিনি। পরীক্ষায় ভালো ফল করে শিক্ষার্থীরা যখন আনন্দ উল্লাস করছেন, তখন চিরনিদ্রায় শায়িত প্রিয়। প্রিয়র এমন সাফল্যে কাঁদছেন তার মা-বাবা ও স্বজনরা।
প্রিয় শহরের মুজিব সড়ক এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শাকিল ওয়াহিদ ও গৃহিণী রেহেনা পারভীন দম্পতির সন্তান। প্রিয় ছাড়াও এই দম্পতির ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।
প্রিয়র বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নীল রঙ করা চারতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি। এই বাড়িটির নিচতলাতে সপরিবারে ভাড়া থাকেন প্রিয়র পরিবার। পরীক্ষায় ভালো ফলে যখন বাড়িটিতে আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকার কথা, তখন বাড়িজুড়ে চলছে শোকের মাতম। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই প্রিয়র ব্যবহৃত জিনিসপত্র খুলে খুলে দেখান প্রিয়র মা রেহেনা পারভীন। টেবিলের পাশে সাজিয়ে রাখা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির নানা বই নেড়েচড়ে মুছছিলেন।
রেহেনা পারভীন বলেন, আমার ছেলে অনেক ভালো ছিল। বাবা-মা ছাড়া তার জীবনে কিছু ছিল না। স্বপ্ন দেখত তার দুই ভাইকে মানুষ করবে, মা-বাবারও দেখাশোনা করবে। এসব এখন শুধুই স্বপ্ন! প্রিয়র পাসের খবর আমার জন্য খুশির। কিন্তু খুশি উদযাপন যার সঙ্গে করব, সে তো আমার কাছে নেই। আগুনে পুড়ে আমার স্বপ্নটা শূন্য করে দিয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সবই আছে, শুধু নেই প্রিয়। মনে হয়, এখনই আমার কাছে ফিরে আসবে। কে এসে বলবে, দেখো মা আমি পাস করেছি। তোমার দোয়া কাজে লেগেছে।
প্রিয়র বাবা শাকিল ওয়াহিদ বলেন, আমার ছেলে বলত, বাবা তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি আইএলটিএস করব, বিদেশ যাব। সংসারটা আমিই দেখব।
প্রসঙ্গত, যশোরের পাঁচতারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেককে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন ২৪ জন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত