মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেন ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে হয়

| আপডেট :  ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩  | প্রকাশিত :  ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। তবে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরও সাধারণ মানুষের ভোটের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। তাদের ভোটের ফলাফল নির্ধারণ হয় এক বিশেষ পদ্ধতি, যা ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে পরিচিত। তবে, কী এই ইলেকটোরাল কলেজ? কেন এটি চালু করা হয়েছিল? এটি কীভাবে কাজ করে? চলুন, এই পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

কেন ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছিল?

ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি ১৭৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচনাকারীরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে তৈরি করেছিলেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো:

যোগাযোগের সমস্যা: স্বাধীনতার পরপর যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই সীমিত ছিল। এত বড় দেশের রাজ্যগুলোর মধ্যে দূরত্ব থাকায় সরাসরি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা সম্ভব ছিল না। তাই, রাজ্যগুলোর প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা হয়।

বড় রাজ্যগুলোর আধিপত্য: দেশটির জনগণের সরাসরি ভোটে যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতো, তাহলে বড় রাজ্যগুলোর প্রার্থীরা সবসময় জয়ী হতো, ছোট রাজ্যগুলোর স্বার্থ উপেক্ষিত হতো। ইলেকটোরাল কলেজে ছোট রাজ্যগুলোর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে তাদেরও প্রভাব থাকে।

দাসপ্রথা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য: সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর দাসদের গণনা করা হতো, যদিও তারা ভোট দিতে পারত না। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে তারা অতিরিক্ত ভোট পেয়েছিল, যা তাদের রাজনৈতিক শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিল।

একক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা না থাকা: যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচনাকারীরা চাননি, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হোক। তাই, নির্বাচনের দায়িত্ব তারা প্রতিনিধিদের হাতে দিয়েছিলেন।

 ইলেকটোরাল কলেজ কীভাবে কাজ করে

প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট থাকে, যা মূলত জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। দেশটিতে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ভোট পেতে হয়। সাধারণত, যেই প্রার্থী একটি অঙ্গরাজ্যের সাধারণ ভোটে জয়ী হন, সেই প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যান।

ইলেকটোরাল কলেজের সুবিধা হলো ছোট রাজ্যগুলোর গুরুত্ব বাড়ে এ পদ্ধতিতে, এ ছাড়া প্রার্থীদের লক্ষ্য করে প্রচার করা সহজ হয়, কারণ নির্বাচনী প্রচারণা শুধু বড় রাজ্যগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পুনর্গণনা সহজ হয়, কারণ ভোটের ফলাফল নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক।

অপরদিকে ইলেকটোরাল কলেজের বেশকিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন: কখনো কখনো সাধারণ ভোটে জয়ী প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোটে হেরে যেতে পারেন। সুইং স্টেটগুলোর হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা থাকে, যা কিছু ভোটারের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।

তারপরও ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থার একটি বিশেষ অংশ, যা বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত