মার্কিন নির্বাচনে টার্নিং পয়েন্ট পেনসিলভানিয়া
টানা দুই বছর ধরে প্রচারের শেষ মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, একদম চূড়ান্ত সময়টা এসে পৌঁছেছে। এখনো নির্ধারণ হয়নি কে হতে যাচ্ছেন আগামী চার বছরের হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা। তবে এই মুহূর্তে, সব চোখ পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের দিকে। ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে, সবচেয়ে বড় সুইং স্টেট হিসেবে রাজ্যটি এখন হোয়াইট হাউসের ভাগ্য নির্ধারণে সবচেয়ে বড় ‘ট্রাম্প কার্ড’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চূড়ান্ত এই সময়ে, ডেমোক্রেটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে অপরের সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের শেষ দৌড়ে যোগ দিয়েছেন। দুই প্রার্থীর কাছে পেনসিলভানিয়া একমাত্র সেই স্বর্ণমুকুট, যা তাদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলতে পারে।
পেনসিলভানিয়া: এক রাজ্যের হাতে শাসনক্ষমতার চাবি
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যটি যেখানে ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে, এই মুহূর্তে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হয়ে উঠেছে। গত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে ১০ বার পেনসিলভানিয়া নির্বাচন চূড়ান্ত করেছে কে হবে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ রাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবে ‘ব্লু ওয়াল’ (একটি রাজনৈতিক ধারণা যা মূলত ডেমোক্রেটিক পার্টির শক্তিশালী নির্বাচনী ভিত্তি গঠিত তিনটি রাজ্য—পেনসিলভানিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিনকে নির্দেশ করে)-এর অংশ। যেখানে পাশের মিশিগান ও উইসকনসিনের মতো রাজ্যও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দিক পরিবর্তন করে যে কোনো সময়। কিন্তু এবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যটি যে কাউকে ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের ‘ম্যাজিক নম্বর’ ছুঁতে সাহায্য করতে পারে, যা আরও নাটকীয় হয়ে উঠেছে এখন।
এদিকে কমলা হ্যারিসের জন্য, পেনসিলভানিয়া রাজ্যে জয়ী হলে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট সংখ্যা পার করতে পারবেন অনায়েসেই এবং এটি তার জয়ের একমাত্র পথ। ১৯৪৮ সালের পর থেকে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ভোট ছাড়া জয়ী হননি, তাই এই রাজ্যটি কমলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে জয়ী হতে তাকে মোকাবিলা করতে হবে ট্রাম্পের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা!
ট্রাম্পের ‘পেনসিলভানিয়া শপথ’
২০১৬ সালে, পেনসিলভানিয়াকে প্রথমবারের মতো রিপাবলিকানদের দখলে আনেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ২০২০ সালে সেই রাজ্যটি চলে যায় জো বাইডেনের কাছে। ২০২৪ সালে ট্রাম্প আবার পেনসিলভানিয়া ফিরিয়ে আনার জন্য মরিয়া। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে তীব্রতা এসেছে এক বিচিত্র ঘটনা থেকে। জুলাই ২০২৪-এ পেনসিলভানিয়ার বাটলার শহরে এক র্যালিতে ট্রাম্পের ওপর হামলার চেষ্টা হয়। সেই ঘটনাটি পেনসিলভানিয়া রাজ্যটিতে ট্রাম্পের জন্য একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক মুহূর্তে পরিণত হয়। যার ফলে ট্রাম্প শপথ নিয়েছেন যেভাবেই হোক পেনসিলভানিয়া রাজ্য ফিরিয়ে আনতেই হবে!
পেনসিলভানিয়া রাজ্যের জনগণ
পেনসিলভানিয়া রাজ্যের জনগণ বৈচিত্র্যময়। সাদা কর্মজীবী শ্রেণি, যারা ঐতিহ্যগতভাবে রিপাবলিকানদের সমর্থন করেন, এবার কোথায় ভোট দেবেন? এদিকে কমলা হ্যারিস এই জনগণের মধ্যে কিছুটা জায়গা করে নিয়েছেন, তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে কয়েকটি এলাকায়। অপরদিকে, ট্রাম্প প্রবীণ ভোটারদের মধ্যে এখনও শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছেন, যাদের সমর্থন ২০১৬ এবং ২০২০ উভয় নির্বাচনে তাকে সাহায্য করেছে।
তবে পেনসিলভানিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাংশে ল্যাটিনো জনগণের সংখ্যা বাড়ছে এবং এ জনগণও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত পুয়ের্তো রিকান সম্প্রদায়, যারা ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের পর কমলা হ্যারিসের দিকে ঝুঁকেছে। এ ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার জন্য, কমলা হ্যারিস অত্যন্ত সতর্কতার তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ভোটারদের সমর্থন লাভের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ফ্র্যাকিং ও শক্তি নীতির নাটকীয় মোড়
পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক রাজ্য হওয়ায়, ফ্র্যাকিং (প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন পদ্ধতি) একটি তীব্র বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। এ বিষয় নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্রমণ করেছেন কমলাকে, তার পূর্বের অবস্থানের জন্য যাতে কমলা ‘ফ্র্যাকিং’ নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন। তবে কমলা হ্যারিস বর্তমানে তার পূর্বের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। এই ইস্যু পেনসিলভানিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি নির্ভর ভোটারদের মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে।
শেষ দৌড়ে পেনসিলভানিয়ার ভোটাররা
সবশেষ এখন, রাজ্যটিতে অবশেষে আসছে সেই অন্তিম মুহূর্ত। যেখানে কেবল ১৯টি ভোট নয়, পুরো মার্কিন নির্বাচনের ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে। কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই তাদের প্রচারণা এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা ঢেলে দিয়েছেন পেনসিলভানিয়ায়, কারণ তারা জানেন এখানে জয়ী হলে তাদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
এভাবেই পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যটি হতে চলেছে ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের নাটকীয় ও চূড়ান্ত টার্নিং পয়েন্ট। যেখানে সবার চোখ থাকবে এবং সম্ভবত সেই ভোটই শেষ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে এক দুঃসাহসী নির্বাচনকে!
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত