বিনা পারিশ্রমিকে ৫০০ কবর খুঁড়েছেন তৈয়বুর
নিজের মহল্লা ও আশপাশের এলাকায় দিন বা রাতের যেকোনো সময় মানুষের মৃত্যুর খবর শুনলে ছুটে যান তিনি। গিয়ে মরদেহের মাপ নেন, এরপর শুরু করেন কবর খোঁড়া। তবে এ কাজে তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। কবর খোঁড়াই যেন তার কাছে নেশা। গত ২৫ বছরে পাঁচ শতাধিক কবর খুঁড়েছেন তিনি।
এমন মানবিক কাজ করে এলাকায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মহেশ্বরপাশা খানাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. তৈয়বুর রহমান।
তৈয়বুর রহমান একই এলাকার মো. আবুল হাসেম খানের ছেলে। নিজেও দুই সন্তানের জনক। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ায় বাবার স্মৃতি মনে নেই। তবে মায়ের কাছে তার বাবার সমাজসেবামূলক কাজ এবং মৃত মানুষের জন্য কবর খোঁড়া ও গোসল করানোর কথা শুনেছেন। তার বাবা মারা যান ১৯৮১ সালে। বাবার তৈরি বাড়িতে একটি ছোট ঘরে বসবাস করেন।
ছোটবেলায় এলাকার মুরব্বিদের সঙ্গে কবরস্থানে যেতেন তিনি। কখনো পাশে দাঁড়িয়ে দেখতেন, কখনো কোদাল বা মাটির ঝুড়ি এগিয়ে দিতেন। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি নিজে কবর খোঁড়ার দায়িত্ব নেন। সেই থেকে গত ২৫ বছরের বেশি সময় অন্তত ৫০০ কবর খুঁড়েছেন তিনি।
তৈয়বুর পেশায় একটি সরকারি হাই স্কুলের অফিস সহায়ক। তবু এ কাজ করতে তার কোনো সমস্যা হয় না। সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োগ রাখেন বলে কবর খুঁড়ে কোনো পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেন না তিনি।
জানা যায়, তৈয়বুর খুলনা শহরের কেসিসি এক ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে ফুলবাড়িগেট, মহেশ্বর পাশা, কালীবাড়ি, যোগীপোল, দিঘিরপাড়, খানাবাড়ি, রেলিগেট, এমনকি দৌলতপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মৃত ব্যক্তির কবর খুঁড়েছেন। বিশেষ করে প্রাণঘাতী করোনা মহামারির সময় তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে নিজের পুরো খুলনায়। লকডাউন চলাকালীন যখন কেউ কারও কাছে যেতে ভয় পেত, তখন তিনি একাই এগিয়ে যান করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিতের কবর খোঁড়া, গোসল করানো এবং দাফনের কাজে।
এ সময় খুলনার রূপসা তেরখাদাসহ বিভিন্ন উপজেলায় করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির গোসল ও দাফনের জন্যও তাকে ডাকা হতো। করোনায় নিজে আক্রান্ত হওয়ার ভয় না পেয়ে মানবিকতা দেখিয়ে সবার দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি।
তৈয়বুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা ১৯৬৫ সালে খুলনা আসেন। তখন থেকে এলাকার মৃত ব্যক্তিদের কবর খোঁড়ার কাজ করে দিতেন তিনি। আমিও তাকে সাহায্য করতাম। এরপর বাবা মারা গেলে ১৯৯৫ সাল থেকে আমিই মানুষের কবর খুঁড়ে দিই। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে খানাবাড়ি, মহেশ্বরপাশাসহ আশপাশের এলাকার মানুষ মারা গেলেই আমাকে খবর দিত। কোনো বাধা আমাকে দমাতে পারেনি। এ কাজ করতে গিয়ে আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত