খরস্রোতা মুরাদিয়া নদী এখন মরা খাল!
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় লোহালিয়া নদীর অন্যতম শাখা এক সময়ের খরস্রোতা পুনর্ভবা মুরাদিয়া নদী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণশক্তি হারিয়ে এখন মরা খালে রূপান্তরিত হয়েছে।
একসময় অথৈ পানি, উত্তাল ঢেউ আর তীব্র স্রোতে এ নদীর বুকে শোভা পেত পাল তোলা নৌকা। অথচ আজ সে নদীতে পানি নেই। বড় বড় স্টিমার, লঞ্চসহ নানা ধরনের নৌযান চলাচলের মুরাদিয়া নদীতে এখন নৌকা চলাচলও দায় হয়ে পড়েছে।
ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যাওয়ায় নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মৎস্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত এ নদীতে সারা বছর থাকতো নানা প্রজাতির মাছের অবাধ বিচরণ, ছোটবড় মাছের অফুরন্ত এ উৎসকে ঘিরে জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও আশপাশের এলাকায় অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল।
পলি জমে মাত্র কয়েক বছরে এ নদী ভরাট হয়ে চর জেগে নদীটি এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। সে কারণে মুরাদিয়া নদী এখন আর নদী নয়, মরা খাল। দুপাশে জেগে ওঠা চরে ভরাট হতে হতে গত দুযুগে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে থাকায় চরের খাস জমি বন্দোবস্তের অভাবে চাষাবাদ করা হয় না। প্রায় ১৭ কিমি দীর্ঘ এ নদীটি দুমকি উপজেলার আংগারিয়া ও মুরাদিয়া ইউনিয়নকে দুদিকে বিভক্ত করে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে লোহালিয়া নদীর সঙ্গে মিশেছে।
দক্ষিণ শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মাস্টার জাহিদুল ইসলাম জানান, নদী শুকিয়ে জেগে ওঠা চরের খাস জমি বন্দোবস্তের অভাবে বেশির ভাগই অনাবাদি রয়েছে। তবে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের রেকর্ডিও জমির অগ্রভাগ দাবিতে দখল করে নিয়েছে। এভাবে শত শত একর সরকারি খাস জমি বেহাত হয়ে গেছে।
দক্ষিণ মুরাদিয়া গ্রামের মো. হানিফ নেঘাবান জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ মাসে পানির কারণে মুরাদিয়া নদীর চরে আমন চাষ ব্যাহত হয়। খরা মৌসুমে নদী শুকিয়ে যায়। নদী খনন করা হলে আমন চাষ যেমন হবে তেমনি শুষ্ক মৌসুমে পানি তুলে ইরি ধান চাষ করা যাবে। মুরাদিয়ার নদী খনন করে সেচ প্রকল্প চালু ও খননকৃত মাটি দিয়ে নদীর উভয় তীরে ভেরি বাঁধ নির্মাণ করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের দাবি করেন তিনি।
মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিকদার কালবেলাকে বলেন, মুরাদিয়া ইউনিয়নবাসীর জন্য নদীটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলা শহরের সঙ্গে কম খরচে নৌ-পথে যাতায়াত ও পণ্য যোগাযোগ সহজতর ছিল। নদী ভরাট হতে হলে সরু নালায় পরিণত হয়েছে। সব নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সহজ জীবন-জীবিকা এখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কঠিন হয়ে গেছে। সড়ক পথে অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত খরচ বেড়েছে। কৃষিপণ্য পরিবহনে খরচও বেড়ে গেছে। অপরদিকে নদী ভরাট হয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ায় প্রাকৃতিক সেচের পানি সংকটে ফসলের চাষাবাদ বিঘ্নিত এবং ফসলের উৎপাদনও কমে গেছে। ফলে কৃষি নির্ভর এলাকাবাসীর ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাই জনস্বার্থে মুরাদিয়া নদী খনন করা অত্যাবশ্যক।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত