সোহরাওয়ার্দী ও মোল্লা কলেজের কোনো শিক্ষার্থী নিহত হয়নি : পুলিশ
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দুই জন নিহত হওয়ার খবর সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংস্থাটি জানায়, ওই সময় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লেখিত ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছেন বলে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা সঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হলো।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৬ নভেম্বব ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৮ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতে তার পরিবার ও কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। ২০ নভেম্বর পুনরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় প্রতিবাদকারীদের চাপে হাসপাতালের পরিচালক চার জন ডাক্তার এবং দুই জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অভিজিতের চিকিৎসা সংক্রান্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার পর স্থানীয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসে। এ সময় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তা না মানায় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্র আহত হন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রবিবার (২৪ নভেম্বর) আনুমানিক ২টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পুনরায় ভাঙচুর চালায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার (২৫ নভেম্বর) শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২-১৫ হাজার শিক্ষার্থী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বাহাদুর শাহ পার্কে জমায়েত হয়। তারা আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। আগে থেকে পুলিশ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে অবস্থান করে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা প্রতিহত করে লাঠিসোঁটাসহ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে পুলিশ পুনরায় বাধা দেয়। তারা বাধা অতিক্রম করে ওই কলেজে পৌঁছে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
ডিএমপি জানায়, ৩৫টি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম গঠিত হয়। অপরপক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি জোট রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৩৫ কলেজের ফোরাম ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হয়।
ডিএমপি আরও জানায়, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়ে ওই কলেজে হামলা চালায়। পুলিশ যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলায় জড়িয়ে পড়ে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত