সবাই মনে করে আমি পুঁজিবাজারের ভালো চাই না : আইসিবি চেয়ারম্যান

| আপডেট :  ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮  | প্রকাশিত :  ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮

ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমদ বলেছেন, পুঁজিবাজার উঠলেও আমি ভয়ে থাকি, আতঙ্কিত হই। সবাই মনে করে, আমি বাজারের ভালো চাই না। আসলে ব্যাপারটা তেমন না, ব্যাপারটা হলো শেয়ারের দাম বাড়লে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আসে আর শেষে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর আইডিইবি ভবনের হল রুমে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) আয়োজিত ‘স্ট্রেটেনিং গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্ক ওয়ে ফরওয়ার্ড টু এ ভাইরেন্ট ক্যাপিটাল মার্কেট’ সেমিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সেমিনার আইসিএসবির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম নূরুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মো. মুহসীন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ ও পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স সদস্য কে এ এম মাজেদুর রহমান। কি-নোট প্রেজেন্টার ছিলেন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং ডিএসইর ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার সায়েদ মাহমুদ জুবায়ের।

এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম সাইফুর রহমান মজুমদার এবং ডিএসইসির সিএফও অ্যান্ড ম্যানিজিং ডিরেক্টর এ জি এম সাত্তিক আহমেদ শাহ।

অধ্যাপক আবু আহমদ বলেন, মার্কেট উঠলেও আমি ভয়ে থাকি আতঙ্কিত হয়ে যায়। সবাই মনে করে, আমি বাজারের ভালো চাই না। আসলে তা না, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভয় কাজ করে। ২০১০ সালের আমরা সেটা দেখেছি। অথচ কিছু বিনিয়োগকারী না বুঝেই আমাকে দায়ী করে বলে ওমকের চামড়া তুলে নেব আমরা। মার্জিন লোন তুলে দেবার কথা বলেছিলাম তখনও একই ধরনের কথা বলেছিল। আমার মনে হয়, আসলেই তারা তাদের লাভ ক্ষতির বিষয়টা বুঝতে পারে পারে না।

তিনি বলেন, প্রথমে কয়েকটি ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছি বলে শুভেচ্ছা শুনছিলাম, পরে আইসিবিতে বসানো হলো। অনেকে মনে করছে খুব ভালো আছি, আসলে আমি আগুনের পাতিলের ওপরে বসে আছি। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ডুবে যেতে বসেছিল, কোনোরকমে বাঁচানোর চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুই-চার মাসের মধ্যে ভালো অবস্থানে আসবে। আগের মতো দুর্নীতি হচ্ছে না। কিছু দুর্নীতি হলেও, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। অনেকের শাস্তি হচ্ছে ফলে ভবিষ্যতে অনিয়ম করার সাহস পাবে। সবমিলিয়ে আমি ভালো একটা অর্থনীতির আশা করছি।

মুহসীন চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজার সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের ধারণা একবারেই কম। নবম শ্রেণি থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুঁজিবাজার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পুঁজিবাজার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রুপসা থেকে পাতুরিয়া অনলাইন-অফলাইন সকল মাধ্যমে সচেতনতা চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে ভালো করতে আজকের যে আলোচনা তার অনেকগুলো নিয়ে বর্তমান কমিশন কাজ করছে। বাকি বিষয়গুলোও পুঁজিবাজারের স্বার্থে সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মাজেদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ মেয়াদি অর্থ সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজার নাকি ব্যাংক। পুঁজিবাজার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে কীভাবে সরাসরি সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। সুদের হার কমানোসহ পুঁজিবাজারের স্বার্থে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সুকুকের জন্য আইন ভঙ্গ করে আইন করা হয়েছিল। আমরা প্রবল আপত্তি করার পরেও তা আটকানো যায় নি। ভবিষ্যতে এই রকম যেন না হয়, তার জন্য টাস্কফোর্স কাজ করছে।

মিনহাজ মান্নান বলেন, পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা সুশাসন। ব্রোকার হাউজের মালিকরা সবাই ব্যাংক ক্রাফট, শুধু মুখের জোরটা আছে। আসলে তেমন কিছুই করার ছিল না, কেবল দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে ভালোমানের আইপিও আনতে পারলে বিনিয়োগকারীরা আবার বাজারে ফিরে আসবে। কথায় আছে, ন্যাড়া বেল তলায় একবার যায়, কিন্তু আমার ধারণা এক মাত্র ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগকারীরা বারবার আসে। আমাদের বিনিয়োগকারীরা কোথাও যায়নি। তারা বসে আছে, ভালো আইপিও তাদের আবার ফিরিয়ে আনবে। শুধু প্রয়োজন সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গভার্নেন্স ফেলর। কিছু বিষয়ে পাকিস্তানের চাইতে বাংলাদেশ ভালো করলেও এশিয়ার ১১টি দেশের মধ্যে সবচাইতে খারাপ দুই এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। আইপিও বা মার্কেটে সাপ্লাইটা বাড়াতে হবে। মার্কেটে আইপিও না বাড়াতে পারলে পুঁজি বাড়বে না। মার্কেটের অবস্থাও ভালো হবে না।

তিনি আরও বলেন, ইউপিইউর ক্ষেত্রে নতুন পথ বের করতে হবে। আমরা পুরোনো পথে কোনো সমাধান পাচ্ছি না। বিএসইসির টু সিসি পদ্ধতি বাতিল করতে হবে, ইচ্ছে করলেই কোনো কোম্পানির বোর্ড ভেঙে দিতে পারার কারণে তালিকাভুক্ত হতে অনেক কোম্পানি নিরুৎসাহিত হয় । টু সিসি মূলত সাধারণ শেয়ার মালিকদের জন্য করা হলেও আমরা বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেখেছি একটি বিশেষ শ্রেণি সু্বিধা পায় আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ডিবিএর সভাপতি বলেন, ক্যাপিটাল গেনের ট্যাক্স দেওয়া লাগলেও ক্যাপিটাল লসের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নাই। আমরা চাই গভর্নেন্স ব্যবস্থার প্রতিটি বিষয় স্বচ্ছ হোক। বিদেশি এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ব্যাপারে রাজনৈতিক কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। এমনকি অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও তেমন কিছু দেখছি না।

সাইয়েদ মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, পুঁজিবাজারে কোয়ালিটি কোনো আইপিও নেই। গ্রামীণফোন যখন তালিকাভুক্ত হয় তখন সাড়ে ৫ লাখের মতো বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। তার মানে ভালো মানের আইপিও আনতে পারলে অবশ্যই বিনিয়োগ আসবে।

সাত্তিক আহমেদ শাহ বলেন, ভালো আইপিও ছাড়া আমাদের কাছে কোনো ক্রেতা আসবে না। বিনিয়োগকারীকে বাজারে আনতে হলে অবশ্যই ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে হবে।

সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারে সংকটের কারণ হল স্বচ্ছতার অভাব। সুশাসনের কথা বলা হচ্ছে, শুধু পুঁজিবাজার না সকল সেক্টরে সুশাসন ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।

সভাপতির বক্তব্যে এম নূরুল আলম বলেন, পুঁজিবাজারে মানুষের আস্থা ফেরাতে ভালো আইপিওর আনতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে স্বচ্ছতা ও সুশাসন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত