টাকা ছাড়া মিলছে না সরকারি সেবা!

| আপডেট :  ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২১  | প্রকাশিত :  ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২১


টাকা ছাড়া মিলছে না সরকারি সেবা!

বিশেষ প্রতিবেদন

খানসামা, দিনাজপুর থেকে জে. আর. জামান


দিনাজপুরের খানসামায় টাকা ছাড়া মিলছে না জমির রেকর্ড, পর্চা, মৌজার নকশাসহ সেটেলমেন্ট অফিসের সেবা। টাকা দিলে তবেই মেলে প্রয়োজনীয় সেবা। এদিকে সেবা নিতে এসে হয়রানি ও টাকা নেওয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ সেবাগ্রহীতাদের। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে খানসামা উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ওই অফিসের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাশ চন্দ্র রায়ের অনৈতিক লেনদেনে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে।

১৮ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ সংক্রান্ত সেবা ঘুষ ছাড়া মিলছে না। মিলছে না জমির পর্চা আর মৌজার নকশাও। সেবা পেতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। দালাল ও টাকার মাধ্যমে সহজেই সেবা পাওয়া যায়- কিন্তু টাকা ছাড়া সেবা নিতেই গেলে হয়রানি হতে হয়। প্রতিদিনই ঘটছে এমন ঘটনা। তবে কাজ না হওয়ার ভয়ে অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।

জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে প্রদর্শিত সিটিজেন চার্টার থেকে জানা যায়, জেলা অফিসের অধীন বিভিন্ন উপজেলায় ভূমি মালিকগণকে ফি সহ পর্চার নকল প্রদান, খতিয়ান ও নকশা প্রদান এবং ফি ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠ পর্চা নিতে গেলে আবেদনে ২০/- টাকার কোর্ট ফি এবং ১০০/- টাকা অনুলিপি বাবদ ডিসিআর এর মাধ্যমে আদায় করে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও পর্চা প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা না দিলেই মিলছে না কোন পর্চা।

উপজেলার আংগারপাড়া মৌজার পর্চা নিতে আসা আসাদুজ্জামান আসাদ বিবার্তাকে বলেন, পর্চা নিতে গেলে কর্মচারীরা ৫শ টাকা লাগবে বলে জানায়। সেটাও সামনে সপ্তাহে আসতে বলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক নারী বিবার্তাকে বলেন, আমি দিনমজুর মানুষ। নিজের বসতবাড়ির পর্চা নিতে আসছি। কিন্তু ৫শ টাকার পর্চা ১১শ টাকা চাইলো- তাছাড়া দিচ্ছে না।

হয়রানির স্বীকার আইয়ুব আলী নামের এক যুবক বিবার্তাকে বলেন, ওই অফিসে শুধু টাকা আর টাকাই লাগে। তাছাড়া আর কোনো কথা না।

এই দফতরে সেবা নিতে এসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক বিবার্তাকে বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যায় হয়ে গেলো- তবুও কাজ হলো না। সারাদিন ভ্যান চালাইলে তো কিছু আয় করতে পারতাম।

অফিস সহায়ক সুবাশ রায়ের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, সরকারি নির্ধারিত ফি ব্যতীত আমরা কোনো টাকা নেই না।

এই বিষয়ে পেশকার লেবু মিয়া বলেন, আসলে আমাদের এখানে সেরকম কোনো কাজ নাই। খতিয়ান বিক্রি করা, নকশা বিক্রি করাই আমাদের কাজ।

অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মির্জা জিকরুল হক বেগ মুঠোফোনে বিবার্তাকে বলেন, সরকার নির্ধারিত যে ফি রয়েছে এর বাইরে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আরও একজনের কাছে একই অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

খানসামা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফ হাসান বলেন, সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হলাম। তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দফতরকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

দিনাজপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. শামছুল আজম মুঠোফোনে বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিবার্তা/রোমেল/সউদ

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত